শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ০৫:০৩ পূর্বাহ্ন

“শিক্ষক দিবসে শিক্ষকের মর্যাদা নিয়ে কিছু কথা!”

“শিক্ষক দিবসে শিক্ষকের মর্যাদা নিয়ে কিছু কথা!”

নুর আলম সিদ্দিকী জেলার শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক, 
এবারে শিক্ষক দিবসের স্লোগান
শিক্ষকের কন্ঠসব; “শিক্ষায় নতুন সামাজিক অঙ্গিকার!”

আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেন, “ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খলাক” অর্থ; পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। এখানে পড়ার কথা বলা হয়েছে, কিভাবে পড়বো? কেউ না কেউ তো নির্দেশনা দেবেন বা পড়াবেন, তাহলে তো পড়তে পারবো! যিনি নির্দেশনা দেবেন বা পড়াবেন তিনিই শিক্ষক। শিশু থাকা অবস্থায় বুলি শেখান মা, তাই মা শিক্ষক হতে পারেন। মক্তবে শিক্ষা দেন হুজুর বা ওস্তাদ আবার স্কুলে অ আ ক খ ইত্যাদি যিনি শিক্ষা দেন তিনিও শিক্ষক। অর্থাৎ প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যারা শেখান তারাই শিক্ষক।

 

আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে আল্লাহ শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করেছেন, তাই শিক্ষকের মর্যাদা হওয়া উচিৎ সর্বোচ্চ। জাতিকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হলে কিংবা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। আর এই কাজটি যিনি করেন তাকেই বলা হয় শিক্ষক।
শি- শিষ্টাচার
ক্ষ- ক্ষমাশীল
ক-কর্তব্যপরায়ন

এই তিন শব্দের সমন্বিত রুপই হলো শিক্ষক।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন শিক্ষক রয়েছে, এর মধ্যে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং মাদ্রাসার শিক্ষকগণ বেশি অবহেলিত। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পেরুলেও শিক্ষকদের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শিক্ষকতার পেশা মহান কিন্তু বেতন-ভাতা নগণ্য। বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষকই ঋণে জর্জরিত। উচ্চসুদে ঋণ নিয়ে সন্তানদের পড়াশোনা করান। অনেক শিক্ষকের চেক ব্যাংকে জমা। বর্তমান বাজারে উচ্চ দ্রব্যমূল্যের কারণে ডাল-ভাত খেয়ে কোনোরকম দিনাতিপাত করতে হচ্ছে শিক্ষককে। অর্থ অভাবে সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো এড়িয়ে চলতে হচ্ছে । বাজারে গেলে মাছ ব্যবসায়ী শিক্ষকের হাতে তুলে দেন বাজারের বড় মাছটি কিন্তু তারা জানেন না শিক্ষকের পকেট ফাঁকা। এতে শিক্ষককে পরতে হয় বিড়ম্বনায়! শিক্ষকগণ সামাজিক মান-মর্যাদায় ভয়ে অনেক সময় নিজেদের লুকিয়ে রাখেন। যার ফলে শিক্ষকগণ বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েন। তাই রাষ্ট্রের উচিৎ শিক্ষকদের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা।

 

শিক্ষার ভিত্তি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা আর প্রাথমিক শিক্ষার প্রাণ বলা হয় সহকারী শিক্ষকদের কিন্তু তাদের বেতন ১৩তম গ্রেডে। শিক্ষক যদি হয় রাষ্ট্রের ৩য় শ্রেণির কর্মচারী! তাহলে শিক্ষার মান কেমন হবে? বিগত কয়েকটি নিয়োগে দেখা যায়, অধিকাংশ শিক্ষক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাধিক ১ম শ্রেণি পাওয়া অনেক স্বপ্ন নিয়ে যোগদান করেন কিন্তু যোগ্যতা অনুযায়ী বেতন এবং পদোন্নতি না থাকায় কিছুদিন পর অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হন। তাই মেধাবীদের ধরে রাখতে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দিয়ে ভিত মজবুত করতে পারলে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা বদলে যাবে।

 

 

এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের শিক্ষকদের বেতন দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলোর তলানিতে । দক্ষিন এশিয়ার দেশ ভারতে প্রাথমিক শিক্ষকদের গড় বেতন ২৮৫ ডলার, শ্রীলংকায় বেতন ২৫০ ডলার, পাকিস্থানে বেতন ২০৬ ডলার এবং বাংলাদেশে শিক্ষকদের বেতন ১৭০ ডলার। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষকদের গড় বেতন ১৭০ ডলার যা দেশের মানুষের গড় মাসিক আয়ের তুলনায় প্রায় ৬২ ডলার কম।

 

মর্যাদাশীল উন্নত জাতি গঠন করতে হলে মর্যাদাবান শিক্ষক তৈরি করতে হবে। গাছের গোড়ায় জল ঢালতে পারলে গাছের শাখা- প্রশাখা এমনিতেই সতেজ হবে।
রাষ্ট্র সংস্কারের ১ম পদক্ষেপ হওয়া উচিৎ শিক্ষা সংস্কার দিয়ে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে কয়েকটি কমিশন গঠন করলেও এখনো শিক্ষা কমিশন গঠন করেননি, আশাকরি খুব তাড়াতাড়ি শিক্ষা কমিশন গঠনের মাধ্যমে বিদ্যমান বৈষম্যগুলো দূরীভূত করতে সক্ষম হবেন।
৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবসে বিদ্যমান বৈষম্য নিয়ে আলোচনা করেছিলাম তা হুবহু তুলে ধরছি;
* আগামী বাজেটে শিক্ষা ও গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি করা
* শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র পে স্কেল ঘোষণা করা
* প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ ২০১৯ নিয়োগবিধি অনুযায়ী স্নাতক ২য় শ্রেণির সহকারী শিক্ষকদের
১০ম গ্রেড এবং শতভাগ পদোন্নতি, প্রধান শিক্ষকদের ৯ম গ্রেড প্রদান করা
* মাধ্যমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করা
* এনটিআরসিএ এর মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের জন্য বদলির ব্যবস্থা করা
* মাদ্রাসা শিক্ষাকে আধুনিকায় এবং শিক্ষকদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষকণের বসবস্থা করা।

শিক্ষকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিতে হলে মর্যাদাশীল হবে জাতি, উন্নত হবে দেশে, হেঁসে উঠবে প্রিয় স্বদেশ বাংলাদেশ। আশাকরি শিক্ষক এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ঠ যৌক্তিক দাবিগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারলে এবারের শিক্ষক দিবসের স্লোগানের মর্ম সার্থক হবে ।

 

 

নুর আলম সিদ্দিকী জেলার শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক, বড়খাতা, হাতীবান্ধা, লালমনিরহাট।

 

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT