বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ১০:০৯ অপরাহ্ন

বিমান তৈরি করে আকাশে উড়ালেন দহগ্রামের সোহেল রানা

বিমান তৈরি করে আকাশে উড়ালেন দহগ্রামের সোহেল রানা

রংপুর টাইমস :

প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই ফোম,ককশিট, সাইকেলের এসফোক, ফ্যানে মটর, স্যান্ডেলের সোল,গুনা,আটা,বাসসহ বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করে বিমান তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করলেন অটোরিকশা চালক সোহেল রানা।

 

সোহেল রানা ইতিমধ্যে পরপর দুইটি বিমান তৈরি করে সফলভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণ করেন। রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে বিমানটি পরিচালিত হয়। তার তৈরি বিমানটি এক নজর দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা। তার স্বপ্ন সে বিমানের পাইলট হবেন। কিন্তু তার স্বপ্ন বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অভাব অনটন। তারপরও সবার সহযোগিতা নিয়ে সে পড়াশোনা করে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চায়।

জানা গেছে,লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বহুল আলোচিত দহগ্রাম- আঙ্গোরপোতা ভূখণ্ডের গুচ্ছগ্রাম বাজারের ইউনুস আলী ও শাহিনুর বেগমের ছেলে সোহেল রানা। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারনে দহগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি।

বাবা ইউনুস আলী গ্রামে গ্রামে গিয়ে ফেরি করে বিভিন্ন মালামাল বিক্রি করেন। মা শাহিনুর বেগম গৃহিণী। অভাবের সংসার। একসময় সোহেল রানা পড়াশোনা বাদ দিয়ে এনজিও এর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে একটি অটো রিক্সা কিনেন। সেই অটো রিক্সাটি চালিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ ও পরিবারের সংসারের হাল ধরেন সোহেল রানা।

 

সোহেল রানা জানান,ছোট থেকেই বিমান তৈরির স্বপ্ন ছিল। ৫ বছর ধরে ইউটিউব ও মানিকগঞ্জের জুলহাসের বিমান তৈরি দেখে আরও প্রচুর ইচ্ছা জাগে। অভাব-অনটনের সংসারে বিমান তৈরির টাকা কোথায় পাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকলেও থেমে যায়নি সোহেল রানা।

এদিকে প্রতিদিন অটো চালিয়ে ৫ থেকে ৭ টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে ঋণের পরিশোধ ও বাকি টাকা দিয়ে সংসার চালাই।

বর্তমানে মাত্র ১৫ হাজার টাকা খরচ করে
দৈর্ঘ্য ২১ইঞ্চি প্রস্থ ২৮ইঞ্চি ওজন ৩৮০ গ্রাম বিমান তৈরি করে সফলভাবে উড্ডায়ন ও অবতরণ করেন। এর আগে ২০২৪ সালে দৈর্ঘ্য ২৮ ইঞ্চি প্রস্থ ৪২ ইঞ্চি বিমান তৈরি করেন। সেটিতেও সফল হন।

বর্তমানে বিমানটি ১২ থেকে ১৫ মিনিট এক কিলোমিটার আকাশের উপরে উড়ে প্রায় ১০ কিলোমিটার যেতে পারবেন। রিচার্জেবল লিপো ব্যাটারির শক্তিতে চালিত বিমানটি রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই বিমানটিতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরা লাগালে দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূর থেকে অনায়াসে দেখা যাবে।

সোহেল আরও রংপুর টাইমসকে জানান, আমার স্বপ্ন আমি পড়াশোনা করে পাইলট হতে চাই। এজন্য এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতার প্রয়োজন। বিমান তৈরির কোনো সহযোগিতা পেলে আমি আরো ভালো কিছু করে দেখাতে পারবো। পাশাপাশি বিমান তৈরি করে বাংলাদেশের জন্য কাজে লাগাতে চাই।

সোহেল রানার মা শাহিনুর বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ অভাব অনটনের কারণে আমার ছেলের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। ছোট থেকে সোহেল রানা বিভিন্ন খেলনা বিমান তৈরি করে। এজন্য আমরা কেউ কিছু বলি না।

 

দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য গোলাম রব্বানী  রংপুর টাইমস কে বলেন,ছোট থেকেই ছেলেটি মেধাবী। আর্থিক কারণে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় তার। বর্তমানে সে অটো চালায় পাশাপাশি সে বিমান তৈরি করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। তার বিমান উড়ানো দেখতে শত শত মানুষ তার বাড়িতে ভিড় জমায়।

 

 

এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিল্লুর রহমান বলেন,তার এই প্রতিভা দেখে আমরা সন্তুষ্ট। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT