পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি:
রংপুরের পীরগাছায় ঘাগট নদী থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। পীরগাছা ও মিঠাপুকুর উপজেলার সীমান্তবর্তী কালুরঘাট সেতুর কাছ থেকে গত এক সপ্তাহ ধরে দেদারছে এস্কেভেটর মেশিন (ভেকু) দিয়ে এসব মাটি কাটার উৎসবে মেতেছেন স্থানীয় আঙ্গুর মিয়া ও মোখলেছুর নামে দুই ব্যক্তি।
এতে করে ঝুঁকিতে রয়েছে কালুরঘাট সেতু ও নদী সংলগ্ন ফসলি জমি। এ বিষয়ে ফসলি জমির মালিকরা প্রতিবাদ করেও কোন ফল পাচ্ছেননা। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি বিএনপি-জামায়াতের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব অপকর্ম করছেন বলে জানা গেছে। বিভিন্ন পক্ষকে ম্যানেজ করে এই কর্মকান্ড চালাচ্ছেন বলে জানান অভিযুক্তরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই সেতুর নিচে প্রায় ১০০ ফিট দুরে এস্কেভেটর মেশিন (ভেকু) দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক্টরে করে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ট্রাক্টরগুলি একটি বসতবাড়ির টিনের চাল ও বেড়া ঘেঁষে চলাচল করছে। ভেকু মেশিন ও ট্রাক্টর দেখাশোনা ও হিসাব রাখার জন্য রয়েছে দু’জন ব্যক্তি। একজন বালু খেকো আংগুর মিয়ার ভাতিজা নিরব। অপরজন বুলবুল মিয়া। সাংবাদিক দেখে বুলবুল মিয়া প্রথমে মাটি কিনতে এসেছেন বলে জানালেও পরে তিনি দাবি করেন, তিনি জামায়াতের লোক। পারুল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সাধারন সম্পাদক। তবে স্থানীয় কেউ কেউ তাকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কথা জানান।
এ সময় স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন প্রায় শতাধিক ট্রাক্টর মাটি সেখান থেকে কেটে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতি ট্রাক্টর মাটি এক হাজার টাকা করে বিক্রি করা হয়। প্রতিনিয়ত এসব ট্রাক্টর যাওয়া-আসার কারণে ভেঙ্গে যাচ্ছে পাকা সড়ক, ঘটছে দুর্ঘটনা। স্থানীয় মোজাম আলী, রফিকুল ইসলাম বলেন, যে ভাবে ভেকু দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে, তাতে সামনের বর্ষায় আমাদের তিন ফসলি জমি নদীতে চলে যাবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। মাটি কাটা লোকজন স্থানীয় রাজনীতির সাথে জড়িত। তাই কে শোনে কার কথা! তারা নাকি দুই উপজেলার প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব করছে। তাই আমরা অসহায়। এ সময় ওই বাড়ির বৃদ্ধ মোখলেছুর রহমান বলেন, হামার ঘরের পিড়ালি ঘেঁষি প্রতিদিন এসব ট্রাক্টর চলতোছে। সারা দিন ধুলাবালুতে বাড়িঘর একাকার হয়া যায় । কাক বিচার দেমো, হামরা গরীব মানুষ, কইলে কি শোনবে! তাই কিছু কই না। গরীবের আল্লাহ ছাড়া কেই নাই! এ বিষয়ে অভিযুক্ত আংগুর মিয়া বলেন, দুই উপজেলা প্রশাসন ম্যানেজ করা হয়েছে। এই বালু বিক্রির টাকায় ট্রাক্টর প্রতি ১০০ টাকা পায় বিএনপি, দেড়’শ টাকা পায় রাস্তার জমি ভাড়া। এছাড়া সাংবাদিক, ছাত্রদল, যুবদলসহ স্থানীয় অনেক ছেলে আছেন। সবাইকে টাকা দিতে হয়। প্রশাসনের অনুমতি আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মৌখিক অনুমতি আছে। পুলিশ আসলেই তো দুই-তিন হাজার টাকা দিতে হয়। পীরগাছা উপজেলা জামায়াতের আমির বজলুর রশিদ মুকুল এবিষয়ে বলেন, অবৈধ কাজে আমাদের কেউ জড়িত থাকলে আমরা ব্যবস্থা নেব। এটা সংগঠনের সবাইকে বলা হয়েছে। পীরগাছা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা বলেন, বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ যদি এ ধরনের কাজ করেন, তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।
পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, পুলিশের অনুমতি বা টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি ইউএনওকে বলেন, আমরা দেখছি।
এ ব্যাপারে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র বর্মন বলেন, দুই উপজেলার প্রশাসন মিলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমন বলেন, আমরা অতি দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।