শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৪২ অপরাহ্ন

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, পানিবন্দী ১২ হাজার 

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, পানিবন্দী ১২ হাজার 

সাইফুর রহমান শামীম,কুড়িগ্রাম: 

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমারসহ সবকটি নদ-নদী পানি কমতে শুরু করলেও বন্যা পরিস্থিতি অপিরিবর্তিত রয়েছে। জেলার ৯ উপজেলায় পানি বন্দী হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১২ হাজার পরিবার। এতে করে ভোগান্তি বেড়েছে বন্যা কবলিত এলাকার মানুষজনের।

সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছে চরাঞ্চলের পরিবারগুলো। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকায় নতুন জেগে উঠা চরাঞ্চলের ঘর-বাড়ি ৫ দিনে ধরে পানিতে তলিয়ে থাকায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন তারা। অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে নৌকা ও উঁচু স্থানে অবস্থান করলেও পড়েছেন শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার পূর্ব বালাডোবা, কালির আলগা, মুসারচর ও সদরের পোড়ার চরসহ ১০টি চরে বসবাসকারী দুই শতাধিক পরিবার ঘর বাড়ি ছেড়ে নৌকা ও উঁচু জায়গায় অবস্থান নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এই পরিবারগুলোর ঘর বাড়ি তলিয়ে থাকায় ঠিকমতো রান্না করতে পারছেন না তারা। পাশাপাশি পরিবারগুলোর হাতে কোন কাজ না থাকায় শুকনো খাবার এবং নলকুপ তলিয়ে থাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন তারা। এদিকে নদ-নদীর অববাহিকার গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। জেলার প্রায় ১শ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

চারনভূমি তলিয়ে থাকায় চরাঞ্চলগুলো গবাদি পশুর খাদ্য নিয়েও বিপাকে পড়েছেন বন্যা কবলিতরা। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীতে পানি বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া দুপুর ১২টায় দেয়া তথ্যমতে জেলার পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার নদের পানি বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়াও কুড়িগ্রাম সদরের ধরলার সেতু পয়েন্টে ৩৯ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৫৫ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৬১ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ৮৯ সেন্টিমিটার বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের পুর্ববালাডোবার চরের আব্দুর রহমান জানান এই চরে ৪গটি পরিবারের বসবাস। চরটি নতুন এবং নিচু হওয়ায় এখানকার বেশির ভাগ ঘর বাড়িতে কোমর সমান পানি উঠেছে। অনেকেই ঘর বাড়ি ছেড়ে উঁচু জায়গা ও নৌকায় বসবাস করছেন। নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় ঠিকমত পানিও পাওয়া যাচ্ছে না। ঠিকমত রান্না করতে না পারায় অনেককে একবেলা খেয়েই দিন পার করতে হচ্ছে। সদরের পঁাচগাছী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়ার মমিন জানান, পানি হ্রাস পেলেও এখনো বাড়ির চারিদিকে পানি।

 

আবার পানি বৃদ্ধি পায় কিনা তা চিন্তায় আছি। পটলসহ সব সবজি ক্ষেত পানি নিচে। এবারের বন্যায় খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছি। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। যদি আর বৃষ্টিপাত না হয় তবে খুব দ্রুতই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

 

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকল প্রকার প্রস্তুতি নেয়া আছে। নগদ অর্থ শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে। যেখানে যখন প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহন করতে ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ত্রান বিতরনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT