কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
উজানের ঢল আর ভারী বৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামের সব নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে জেলার প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
একদিকে বন্যার আতঙ্ক, অন্যদিকে নদী ভাঙনের তীব্রতায় বেকায়দায় পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষজন। ঘরে পানি ওঠায় অনেকে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছেন। কেউ আবার উপায় না পেয়ে খোলা আকাশের নিচে, নৌকায় রাত্রীযাপন করছেন। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সোনাহাট রেলসেতু পয়েন্টে দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরইমধ্যে স্রোতের তোড়ে দুধকুমার নদের নাগেশ্বরী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। এছাড়া ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা নদীর পানি কোথাও বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই কোথাও বা সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ঘরবাড়িতে পানি ঢুকতে শুরু করছে। বাধ্য হয়ে উঁচু জায়গায় ঘর করে, অন্যের বাড়িতে কিংবা রাস্তায় খোলা আকাশের নিচে তাবু করে আশ্রয় নেওয়া শুরু করেছে লোকজন। চলমান এ পরিস্থিতিতে ওষুধ, শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের প্রয়োজন বলে মনে করছেন জনপ্রতিনিধিরা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে তিন হাজার, মোগলবাসা ইউনিয়নে দুই হাজার, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের দুই হাজার, নাগেশ্বরী উপজেলার বামডাঙা ইউনিয়নে এক হাজার, ভুরুঙ্গামারী উপজেলার চর ভুরুঙ্গামারী ইউনিয়নের এক হাজার ও চিলমারী উপজেলায় প্রায় এক হাজার মানুষ পানিবন্দি আছে বলে জানা গেছে।
নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙা ইউনিয়নের পাটেশ্বরী গ্রামের বাসিন্দা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, বুধবার দুধকুমার নদের তোড়ে বাঁধ ভেঙে শতশত ঘর বাড়িতে পানি ঢুকতে শুরু করছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমিসহ সবজিক্ষেত। পুকুর তলিয়ে মাছ চাষিদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। যে হারে পানি বাড়ছে তাতে বড় ধরনের বন্যা হওয়ার আশঙ্কা করছি।
সদর উপজেলার পোড়ার চরের বাসিন্দা মো. আফতার হোসেন বলেন, গত চারদিন ধরে পানিবন্দি। টিউবওয়েল তলিয়ে গেছে। চুলার অভাবে রান্না ঠিকমতো হচ্ছে না। একবেলা রান্না করে দুবেলা খাই। বিশুদ্ধ পানি ও শুকনা খাবারের খুবই দরকার। এছাড়া গবাদি পশু নিয়ে খুবই বিপদে পড়েছি। নিজে কী খাই, আর গরু-ছাগলদের কী খাওয়াই।
যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, আমার ইউনিয়নে প্রায় তিন হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। নৌকা, ভেলা ছাড়া চলাচলের কোনো উপায় নেই। পানিবন্দি ওইসব মানুষের জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী ২২ ও ২৩ জুন দুদিন জেলার নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি হবে। এতে করে সাময়িক বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। তবে বড় ধরনের কোনো বন্যা হবে না। কেননা মধ্যস্থল উঁচু হওয়ায় উজানের ঢল এসে দ্রুত নেমে যাবে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ বলেন, বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। এছাড়া জনগণের দুর্ভোগ কমাতে সব উপজেলার ইউএনও এবং ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৫৪১ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১০ লাখ ২১ হাজার টাকা ও শুকনা খাবার মজুত রয়েছে।