বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন

সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে বেরোবিতে মৌন মিছিল

সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে বেরোবিতে মৌন মিছিল

বেরোবি প্রতিনিধি:

সাম্প্রতিক সময়ে ঘোষিত সরকারের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত থেকে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রত্যাহারের দাবিতে মৌনমিছিল ও কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি পালন করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) শিক্ষক সমিতি।

 

মঙ্গলবার (১৪ মে) বেলা ১১টায় ক্যাম্পাসের রাসেল চত্বরে শিক্ষকগণ কালো ব্যাজ ধারণ করে মৌনমিছিল বের করেন। মৌনমিছিলটি ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেখ রাসেল চত্বরে এসে শেষ হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

 

মৌনমিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. বিজন মোহন চাকী ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ।

 

তারা বলেন, আগামী ১ জুলাই থেকে যোগদানকৃতদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার আওতাভুক্ত করার যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তা বৈষম্যমূলক। এ ধরনের বৈষম্য বাংলাদেশের সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে শিক্ষাদর্শনের চেতনা থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিলেন, এ প্রজ্ঞাপন সেই চেতনাকে অবজ্ঞা ও অবমাননা করার শামিল।

বক্তারা আরো বলেন, সর্বজনীন বলতে আমরা বুঝি, সবার জন্য। কিন্তু উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শিক্ষকদের ওপর যে স্কিম চালু করা হচ্ছে, এটি খুবই বৈষম্যমূলক। নতুন যেই পেনশন স্কিম সরকারি কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য চালু করা হলো সেটা কিভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিম হয়? সার্বজনীন মানে সবার জন্য―এতে কি কোন অস্পষ্টতা আছে? সবার জন্য যদি হয়, তাহলে সরকারি কর্মকর্তাগণ এর আওতার বাইরে থাকবেন কেন?

বক্তারা বলেন, প্রত্যয় স্কিমটি নামে সর্বজনীন হলেও আদতে সর্বজনীন নয়। সরকারের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান―সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র ও বিচার বিভাগকে এই প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে একে সর্বজনীন বলার সুযোগ নেই। স্কিমটি যদি সত্যিই সর্বজনীন হয়ে থাকে তবে একে অধিকতর সর্বজনীন করার জন্য সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র ও বিচার বিভাগকেও এর আওতায় আনা হোক। তা না হলে তড়িঘড়ি করে জারি করা এই অন্যায্য ও বৈষম্যমূলক স্কিম অবিলম্বে বাতিল করা হোক।

সর্বজনীন পেনশনে নতুন স্কিম ‘প্রত্যয়’: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কী লাভ, কী ক্ষতি তুলে ধরে শিক্ষক নেতারা বলেন, এই স্কিম চালু হলে দেশের স্বশাসিত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে অবসর গ্রহণকারী কর্মীদের অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা কমে যাবে। ফলে দেশের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা খাতে মেধাবীরা ভবিষ্যতে অনাগ্রহী হবেন। প্রত্যয় স্কিমের আওতায় অবসরভোগীরা যে পরিমাণ অর্থ প্রতি মাসে পাবেন, তা নির্দিষ্ট নয়‒এর হ্রাস-বৃদ্ধি হতে পারে। অন্যদিকে বর্তমান পেনশন বিধি অনুযায়ী, প্রতিবছর অবসরভোগীদের প্রদেয় অর্থ শতকরা পাঁচ ভাগ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে প্রচলিত অবসর ভাতাকে প্রতিবছর মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করার এই পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। কিন্তু প্রত্যয় স্কিমের আওতায় স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের জন্য তা বাদ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যয় স্কিমে অবসরজনিত সুবিধা বা আনুতোষিক কিংবা কর্মীদের অর্জিত কিন্তু অভোগকৃত ছুটির নগদায়ন সম্ভব নয়। বর্তমানে পাঁচ বছর চাকরি করলেই একজন কর্মীর পরিবারের সদস্যরা নির্ধারিত হারে মাসিক পেনশন প্রাপ্য হন; অথচ প্রত্যয় স্কিমের আওতায় চাকরির সময় ১০ বছরের কম হলে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা শুধু জমাকৃত অর্থ ও এর মুনাফা একবারে প্রাপ্য হবেন। এতে এসব কর্মীর পরিবারগুলোর যথাযথ সুরক্ষা নিশ্চিত হবে না। অথচ বৈষম্যমূলকভাবে শুধু সরকারি কর্মচারীদের পরিবারই আগের নিয়মে পেনশন প্রাপ্য হবেন। বর্তমান পেনশন ব্যবস্থাপনায় পারিবারিক পেনশন থাকার কারণে অবসরভোগীর অবর্তমানে তাঁর স্ত্রী বা স্বামী কিংবা প্রতিবন্ধী সন্তান আজীবন পেনশন পাবেন। এমনকি তাঁর অবিবাহিত কন্যারাও এর কিছু সুবিধা পাবেন। এর সঙ্গে মূল অবসরভোগীর বয়সের কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ প্রত্যয় স্কিমে অবসরভোগী কর্মী ৭৫ বছর বয়সে মারা গেলে তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য আর কোনো সুবিধা পাবেন না।

 

 

শিক্ষক নেতারা আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন নিয়োগ সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রতিটি পদোন্নতিতেই নতুনভাবে নিয়োগপত্র দেয়া হয় এবং নিত্য নতুন শর্তাবলী সংযোজন করা হয়। এখন প্রশ্ন হলো, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকেরা যখন ১ জুলাই ২০২৪ তারিখের পর একই বা অন্য প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর পদে নতুনভাবে যোগ দেবেন, তাঁরাও কি প্রত্যয় স্কিমের অধীনে যাবেন? তাহলে আজকে যিনি সহযোগী অধ্যাপক কালকে তিনি অধ্যাপক হিসেবে নতুন করে নিয়োগ পেলে অথবা অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোন দেশ থেকে আসা কেউ সরাসরি অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পেলে তার ক্ষেত্রে কি হবে? বিগত দশকে সরকারি চাকুরিতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে বিশেষ করে প্রশাসন, পুলিশসহ বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসে। পক্ষান্তরে, বিশ্বিবিদ্যালয় শিক্ষকতা পেশায় প্রতিনিয়ত সুযোগ সুবিধা কমানো হচ্ছে, নতুন নতুন নিয়মের শিকলে বন্দি করা হচ্ছে‒ফলে দেশের মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহ হারাচ্ছেন। বিশ^বিদ্যালয়ে সার্বজনীন পেনশন চালু হলে মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় ধরে রাখা চ্যালেঞ্জিং হবে। শিক্ষক মেধাবী না হলে শিক্ষার্থীরা ভাল কিছু শিখতে পারবে না ও তাদের মেধা বিকশিত করতে পারবে না। সর্বোপরি দেশের জনগণ একটি অথর্ব মেধাশূন্য জাতিতে পরিনত হবে।

 

তারা আরো বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়সহ গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্বায়ত্বশাসন প্রদান করে শিক্ষা ও গবেষণাকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিলেন এবং শিক্ষকদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করেছিলেন; এরই ধারাবাহিকতায় আরো স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই প্রজ্ঞাপন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর শিক্ষা দর্শনের প্রতি চর

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT