মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫০ পূর্বাহ্ন

শিক্ষা অর্জনে মাতৃভাষার প্রয়োজনীয়তা

শিক্ষা অর্জনে মাতৃভাষার প্রয়োজনীয়তা

লেখকঃ 
হাছিন আরজু-

প্রায় একটি কথা শোনা যায় ” বাংলিশ”। যার সহজ অর্থ হলোঃ বাংলা + ইংরেজি। ” বাংলিশ” শব্দটির সাথে আমার বিশেষভাবে পরিচয় হয় ইংরেজি মাধ্যমের (ভার্সন) এক ছাত্রকে পড়ানোর সময়।ছাত্রের আবদার “স্যার” আপনি আমাকে বাংলিশ পদ্ধতিতে পড়াবেন। জিজ্ঞেস করলাম, “মানে?”  ছাত্র বললো, ” মানে হলো profit অর্থ লাভ, loss অর্থ ক্ষতি, Interst অর্থ সুদ। আপনি লাভ-ক্ষতির অংক করানোর সময় বলবেন না লাভ-ক্ষতি। বলবেন Profit-loss. এই মূল শব্দগুলো ইংরেজিতে আর বাকিগুলো বাংলায় বলবেন।” ছাত্রকে উল্টো প্রশ্ন করলাম, ” কেন পুরোটা ইংরেজিতে বললে সমস্যা কি?” এইবার আমার ছাত্র কম কথায় বলে দিলো, ” স্কুলে এভাবেই পড়ায়। এভাবে বুজতে সুবিধা হয়। আপনি এভাবেই পড়াবেন। ” গৃহ শিক্ষক হওয়ায় আর বেশি প্রশ্ন করার সাহস পেলাম না। বললাম,” জ্বি, আচ্ছা।”

ইংরেজি মাধ্যমে পড়া ছাত্রের মুখে শোনা “এই যে বুজতে সুবিধা হয়”  কথাটির একটি সহজ অর্থ আছে। অর্থটি হলোঃ বাংলায় পড়লে,  শুনলে হৃদয়ে সহজে আত্মস্থ হয়। মাতৃভাষার  প্রতিটি শব্দ আমাদেরকে আমাদের পারিপার্শ্বিক  পরিবেশের সাথে যুক্ত করে। বাংলায় শেখার মাধ্যমে প্রতিটি শব্দের একটি প্রতিমূর্তি হৃদয়ে অঙ্কিত হয়। ফলে, শিশুরা তা সহজে ভুলে যায় না।  এজন্যেই হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বন্ধুকে দেখেছি ইংরেজি মাধ্যমের হয়েও  বাংলা বই পড়ে। বিষয়টি অন্যকে বুঝানোর ব্যাপারটাও  সহজ করে দেয়। অনেক অভিজাত পরিবারের ছেলে-মেয়েকে দেখা যায় একটি জিনিস হয়তো সে  ভালো বুঝে,  কিন্তু ভালো মত বলতে পারে না। মাতৃভাষায় ভালো দখল না থাকার কারনে এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে।

শিক্ষার্থীরা যে কোন মাধ্যমেই পড়ুক না কেন মাতৃভাষার উপর ভালো দখল অন্য ভাষাগুলো দ্রুত  বুঝে উঠতে সহায়তা করে। ইংরেজি, আরবি, ফ্রেঞ্চ কিংবা মান্দারিন যে কোন ভাষায় শিক্ষা অর্জনের জন্যও বাংলার গুরুত্ব কখনো হ্রাস পায় না। মাতৃভাষায় দখল জ্ঞানচর্চার পথ সুগম করে।  অনুবাদ সাহিত্যের প্রসার ঘটায়। উদাহরণ হিসেবে মধ্যযুগের রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যানসমূহ ও আধুনিক যুগের বহুভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ উল্লেখযোগ্য। বাংলার পাশাপাশি অন্য ভাষাসমূহে পারদর্শিতা তাঁদের এ স্থান দিয়েছে।

ভাষা কখনো থেমে থাকে না। ভাষা হলো নদীর মতোই প্রবাহমান। মাতৃভাষায় শিক্ষা অর্জন ও জ্ঞান বিনিময়ের ফলে প্রতিদিন যুক্ত হয় নতুন নতুন শব্দ। দীর্ঘ হয় ভাষার কলেবর। প্রত্যেক শব্দকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করার মতো রসদ জোগাড় হয়। যেমনঃ সহানুভূতি ও সমানুভূতি দুটি কাছাকাছি শব্দ। কিন্তু শব্দ দুটির রয়েছে আলাদা আলাদা বিশেষ অর্থ।

শিক্ষা বিস্তারে চিন্তার স্বাভাবিক বহিঃপ্রকাশের মধ্যে লুকিয়ে আছে নতুন জ্ঞান সৃষ্টি, পুরাতন জ্ঞানের গতিশীলতা আনয়নের বীজ যা মাতৃভাষায় জ্ঞান সাধনা ছাড়া  পূর্ণতা দান অসম্ভব।  আর এই অসম্ভব কাজটিকে সম্ভব করেছে বাংলার দামাল ছেলেরা।  তাদের এই ঋণের প্রাপ্তি  দু এক কলমে লেখা সম্ভব নয়।

লেখকঃ 
হাছিন আরজু
সমাজকল্যাণ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 
Mobile: 01518986809
Email: hasinarju@gmail.com

 

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT