বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ০৯:০০ অপরাহ্ন

লালমনিরহাটে ঝড়ে লণ্ডভণ্ড অর্ধসহস্রাধিক ঘরবাড়ি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান!

লালমনিরহাটে ঝড়ে লণ্ডভণ্ড অর্ধসহস্রাধিক ঘরবাড়ি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান!

রংপুর টাইমস :
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলায় বয়ে যাওয়া প্রচন্ড ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সড়কের পাশের বড় বড় গাছ উপড়ে পড়ে আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন।
বুধবার (১৪ মে) রাত ১১ টার পর শুরু হওয়া এ ঝড় ও শিলাবৃষ্টি মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট স্থায়ী হলেও তাণ্ডবের পরিমাণ ছিল ভয়াবহ। দুই উপজেলার অন্তত অর্ধসহস্রাধিক কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ঝড়ের সঙ্গে প্রবল শিলাবৃষ্টি হওয়ায় উঠতি বোরো ধান, ভুট্টা, পাট, আম, লিচু, কলাবাগান এবং সবজির ক্ষেত মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় হাজারো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। গাছ উপড়ে পড়ে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল লালমনিরহাট- বুড়িমারী মহাসড়ক ও রেলরুট।
কালীগঞ্জের বানীনগর এলাকায় শতবর্ষী রেইন্ট্রি গাছ উপড়ে পড়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এরপর জেলা পরিষদের সেই গাছ কেটে রাস্তায় চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
আদিতমারীর মহিষখোচা ইউনিয়নের আয়নারপুল বটতলা এলাকায় বিশাল একটি বটগাছ উপড়ে পড়ে দুটি বাড়ির ওপর। এতে অন্তত পাঁচজন আহত হন, যাদের মধ্যে একজন গুরুতর। আহত সেফালী বেগমকে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে, অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু তালেব বলেন, সড়কের পাশে ঝুঁকিপূর্ণ বটগাছটি অপসারণের জন্য বহুবার জেলা পরিষদকে জানানো হয়ছিল। কোনো কর্ণপাত না করায় বুধবার রাতের ঝড়ে গাছটি উপড়ে পড়ে আমার দুটি বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে হয়ে গেছে। আমার স্ত্রীর মাথা ফেটে গেছে। প্রশাসন এর দায় এড়াতে পারে না।
কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। কাকিনা হাট ও বাজার এলাকার বহু দোকানঘরের টিনের চাল উড়ে গেছে। কাকিনা চাঁপারতল কবরস্থান নূরানী ক্যাডেট একাডেমি হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিম খানার টিনের চালা উড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে স্থান নিয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে ব্যবসায়ীদের পণ্য। অনেক বাড়ির মাটির দেয়াল ধসে পড়েছে, বহু পরিবার হয়ে পড়েছে আশ্রয়হীন।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল করিম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ধারদেনা করে এবার ধান আবাদ করেছিলাম। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে সব শেষ হয়ে গেল। এখন কী করব, বুঝতে পারছি না।
ঝড়ে উপড়ে পড়া গাছের কারণে জেলার গুরুত্বপূর্ণ লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে এবং বিভিন্ন গ্রামীণ রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় গাছ অপসারণ করে বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
রেললাইনের ওপর গাছ পড়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলপথে ৩ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে রেলওয়ে বিভাগের একটি দল গাছ অপসারণ করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করে।
নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন এলাকায় ঝড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হাজারো মানুষ খাবার পানি, মোবাইলফোন চার্জ ও রাতের আলো নিয়েও বিপাকে পড়েন। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত লাইনের কাজ চললেও স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে।
জেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ শুরু করেছে। জনপ্রতিনিধি ও ত্রাণ কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বর্তমানে খোলা আকাশের নিচে বা প্রতিবেশীদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের দ্রুত পুনর্বাসন ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলেও ঝড়ের রেখে যাওয়া ক্ষত কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
কালীগঞ্জ উপজেলা নিবর্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা বলেন, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। তাৎক্ষনিক ভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ঘর মেরামতের জন্য সহায়তা করা হয়েছে। জন প্রতিনিধিদের মাধ্যেমে তালিকা করা হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের তাৎক্ষণিকভাবে সাড়ে ৭ হাজার টাকা ও কিছু চাল দেওয়া হয়েছে। তালিকা পেলেই দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণের অনুরোধ উপেক্ষা করার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হয়েছে। কোনো কর্মকর্তার গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT