রংপুর টাইমস:
রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা কোনো ওয়ার্ড চালু করা হয়নি। সাধারণ রোগীদের সঙ্গেই রাখা হয়েছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের। হাসপাতালের নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলার মেডিসিন ওয়ার্ডের ৩ নম্বর এবং ৬ নম্বর ইউনিটে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তাদের।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট না খোলায় সাধারণ রোগীদের সঙ্গে গাদাগাদি করে রাখা হচ্ছে। এতে অন্য রোগীদের মাঝে আক্রান্ত হওয়ারও ঝুঁকি বাড়ছে। দ্রুত ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড চালুর দাবি জানান তারা।
সোমবার (১০ জুলাই) সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ রোগীদের সঙ্গেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সেখানে ১২ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রিহানা (২৭) নামে এক রোগী বলেন, সাধারণ রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্তদের রাখাটা নিরাপদ মনে হয় না। এখানে টয়লেটে মশার উপদ্রব। এছাড়া জানালা দিয়েও মশা আসে। পরিস্থিতি এমন যে, এখান থেকেই ডেঙ্গু ছড়াতে পারে।
সুরুজ্জামান নামে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক রোগী বলেন, ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসি। কয়েকদিন ধরে জ্বর। এ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হলে পরীক্ষার পর ডেঙ্গু ধরা পড়ে। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে একটু ভালো আছি, তবে চিকিৎসাসেবা আরও উন্নত হওয়া দরকার ছিল।
হাসপাতালে আসা খন্দকার রিয়াজুল ইসলাম নামে এক রোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সামান্য একটা মশারি দিয়ে রোগীদের রাখা হয়েছে। খুব বেশি নিরাপদ চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। ডেঙ্গু যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেটা নিয়ে তৎপরতা নেই বললেই চলে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আরেক রোগীর স্বজন মানিক মিয়া বলেন, ডেঙ্গু হলে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। তারা ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। সাধারণ রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের রাখাতে তাদের চিকিৎসাসেবা ব্যহত হচ্ছে। এজন্য আলাদা ওয়ার্ড চালু করা দরকার।
রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী বলেন, এখন পর্যন্ত যারা ভর্তি রয়েছে, তাদের যথাসাধ্য চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। কিছুদিন আগে একজন মারা গেছেন। আমরা চেষ্টা করছি, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড করার। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় সাধারণ রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া আমাদের ইউনিট এবং বেডের সমস্যা রয়েছে।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডেঙ্গু শুধু রংপুর অঞ্চলে না সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। এখন আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। তবে হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের কাছ থেকে আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। যদি কেউ অভিযোগ করে, তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ডেঙ্গু রোগীদের বিশেষ নজরে রাখারও আশ্বাস দেন এই পরিচালক।
গত মঙ্গলবার (৪ জুলাই) সকালে চিকিৎসাধীন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়া বুলেট লাল নগরীর পুরাতন সদর হাসপাতাল কলোনির বাসিন্দা ছিলেন। তিনি ঢাকার একটি সরকারি দপ্তরে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসেই জ্বরে আক্রান্ত হন। পরে পরীক্ষা করে ডেঙ্গু নিশ্চিত হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন মারা যান বুলেট।
এদিকে, রংপুর সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধার নেতৃত্বে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়। এসময় নগরীর কেরানিপাড়ায় একটি নির্মাণাধীন ভবনের নিচতলায় জমে থাকা পানিতে এবং কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকার একটি মেশিনারিজ প্রতিষ্ঠানের ভেতরে রাখা টায়ার ও গাড়ি ধোয়ার জন্য তৈরি করা গর্তের পানিতে ডেঙ্গুর লার্ভা শনাক্ত হয়।
রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, প্রাথমিকভাবে তাদের কড়াভাবে সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তী অভিযানে লার্ভা শনাক্ত হলে জরিমানাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
অভিযানে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মো. হারুন অর রশীদ সহযোগিতা করেন। এসময় ডেঙ্গু রোধে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।