বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৯ পূর্বাহ্ন

বীর নিবাস” নির্মাণে ধীরগতি, ভোগান্তিতে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার

বীর নিবাস” নির্মাণে ধীরগতি, ভোগান্তিতে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার

জামান মৃধা, ডিমলা (নীলফামারী)

মুজিব বর্ষ উপলক্ষে অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সারা দেশের মতো নীলফামারীর ডিমলায় পাঁকা ছাদ বিশিষ্ট বসতবাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য বরাদ্দ করা ঘরের ছাদ ঢালাই দিয়ে লাপাত্তা ঠিকাদার।

 

 

 

এছাড়া অনেকের ঘরের নির্মাণকাজ শুরু করে তা শেষ না করে ফেলে রাখার অভিযোগও উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে এসব অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা পড়েছেন বিপাকে। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের বাড়িতে আবার কেউবা থাকছেন ভাড়া বাসায়।

 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানা যায়, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে সরকার অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একতলা পাঁকা বাসগৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য ২০২০ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এসব বাসগৃহের নাম দেওয়া হয় ‘বীর নিবাস’। ৬৩৫ বর্গফুটের একেকটি বীর নিবাসে ৪টি কক্ষ। ১টি রান্নাঘর, ২টি শৌচাগার ও ১টি বারান্দা নির্মাণ করার কথা। একেকটি বীর নিবাস নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৪ লাখ ১০ হাজার ৩৮২ টাকা করে।

 

২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পর্যায়ে ডিমলা উপজেলায় ১০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বীর নিবাস নির্মাণ করে দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর একই অর্থবছরের দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ২২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য বীর নিবাস বরাদ্দ করা হয়। যার নির্মাণকাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। দরপত্রের শর্ত অনুসারে কাজ প্রাপ্তির ৯০ দিনের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। অদ্যাবধি এ উপজেলায় কোনো বীর নিবাসের নির্মাণকাজ এখনো শেষ করা হয়নি, ৪০-৪৫ শতাংশ কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে। আবার বীর নিবাসের বাসগৃহে যেটুকুর কাজ করা হয়েছে সেখানে ছাদের ফুঁটো দিয়ে পানি পড়ে, দেয়ালের প্লাস্টার সামান্য কষাতে খসে পড়ে, ফাঁটল ধরেছে দেয়ালে, জানালায় সদ্য লাগানো গ্রিলের ঝালাই খসে যাচ্ছে, দরজা লাগানো যায় না কাঠ বেঁকে গেছে।

 

উপজেলার গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত শুটিবাড়ি বাজার সংলগ্ন এলাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের গত ১৪ বছর আগে মারা গেছেন। তার স্ত্রী জামিলা খাতুন ছেলের পরিবারের সঙ্গে একটি টিনের দু’চালা ঘরে বসবাস করতেন। ছেলে ও ছেলের বউ এবং তাদের দুই সন্তান থাকতেন একটি কক্ষে। আর জামিলা খাতুন থাকতেন ওই ঘরের অন্য কক্ষে। ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের জন্য একটি বীর নিবাস বরাদ্দ দেয় সরকার। ২০২১-২২ অর্থবছর দ্বিতীয় পর্যায়ের ওই ঘর নির্মাণের দায়িত্ব পায় মেসার্স সাইকি বিল্ডার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় সাব-ঠিকাদার গোলাম মোস্তফা টিটু ওই ভবনের কাজটি করছেন। তিনি ভবনটির ছাদ ও দেয়াল নির্মাণ করার পর তা ফেলে রেখেছেন দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে। থাকার জায়গা না থাকায় ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার গত আড়াই বছর যাবৎ পার্শ্ববর্তী বাড়িতে মাসিক ২ হাজার টাকা ভাড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদেরের স্ত্রী জমিলা বেগম ও তার ছেলে-সন্তানসহ বসবাস করছেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী জামিলা খাতুন বলেন, আমরা তো সারা জীবন টিনের দু’চালায় কাঁটিয়েছি। সরকার পাঁকা ভবনে বসবাস করার স্বপ্ন দেখাইছে। ঘরটি অর্ধেক নির্মাণ করে দুই বছর ধরে ফেলে রেখেছে।

খগাখরিবাড়ী ইউনিয়নের মোছাঃ ফরিদা বেগম বলেন, আমার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজ উদ্দিন গত ১৪ বছর আগে মারা গেছেন। নিজের একখণ্ড জমি ছিলো সেখানে মুক্তিযোদ্ধার বাসগৃহ বীর নিবাসের বরাদ্দ দেওয়া হয়। ঘর নির্মাণের শুরু থেকেই পরিবারসহ পার্শ্ববর্তী মানুষের বাড়িতে বসবাস করছি। ঘরটির নির্মাণ গত দুই বছরে শেষ করেনি ঠিকাদার। যে বাড়িতে বসবাস করছি তারা এখন চলে যেতে বলছে। আমি এখন কোথায় যাব? ঘরেই যদি থাকতে না পারি তাহলে সরকার আমাদের সে ঘর বরাদ্দ দিলো কেনো!

গয়াবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ গয়াবাড়ী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা জগৎ চন্দ্র ব্যানার্জি একটি ভাঙ্গা টিনের ঘরে বসবাস করতেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমি অসুস্থ মানুষ প্যারালাইজড এর রোগী। আমার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। ঘরটির নির্মাণ কাজ দীর্ঘদিনও শেষ হয়নি। যেটুকু করেছে অত্যন্ত নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে করেছে। নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে তাগিদ দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনেক বলেছি। তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না।

দোহলপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মুক্তা আকতার জানান, বীর নিবাস নির্মাণের জন্য দুই বছর আগে পুরোনো ঘর ভেঙে জায়গা খালি করেছেন। এরপর থেকে তারা একটি ঝুপড়ি ঘরে থাকছেন। দুই বছরেও ঠিকাদার কাজ শেষ করেননি।

উপজেলার ৬টি বীর নিবাস ঘর নির্মাণ করছেন মেসার্স এম.আই ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. মাফিকুল ইসলাম তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বেশি ও ফান্ড না থাকায় আমরা কাজ শেষ করতে পারিনি। এ ছাড়া অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধির আশায় নির্মাণ কাজে কিছুটা ধীর গতি হয়েছে। তবে আগামী ২/৩ মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করে দিবো।

”বীর নিবাস” নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মেজবাহুর রহমান এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

 

 

নীলফামারীর জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ বলেন, বাড়িগুলোর নির্মাণ কাজ কোন অবস্থায় আছে, সে বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT