লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় শিক্ষকতার পাশাপাশি কাঠের গুড়া, মাটি ও পরিত্যক্ত বস্তা সংগ্রহ করে প্রায় এক একর জমিতে মসলাজাতীয় আদা চাষ করে বাড়তি আয় স্বপ্ন দেখছেন শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক রুবেল (৩৩)। তারই আদা চাষে উপজেলা জুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। আদা চাষের লাভবান হয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চান ওই শিক্ষক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আব্দুর রাজ্জাক স্কুল শেষে অবসর সময়কে কি ভাবে কাজে লাগানো যায় এবং বাড়ির পাশে সুপারী বাগানে বাড়তি কোনো ফসল ফলানো যায় কি না তা নিয়ে ভাবতে থাকেন। পরে আদা চাষে ইউটিউব ও স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে সুপারী বাগানের গাছের ফাঁকে ফাঁকে এক একর জমিতে পরিত্যক্ত বস্তায় আদা চাষের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর পরিত্যক্ত বস্তা কাঠের গুঁড়া ও মাটি সংগ্রহ করেন ৫ হাজার ৫০০ বস্তা। পরে বাজার থেকে দেশি আদা বীজ সংগ্রহ করে তা লাগাতে শুরু করে। বর্তমানে আদার গাছ ও সুন্দর হয়েছে। আদার বাম্পার ফলনের আশা করছেন।
আদার ভালো ফলন বাজার চাহিদা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতি আদা গাছের বস্তা থেকে ৭০০ থেকে ১২০০ গ্রাম পেয়ে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা আয় করেন।
ব্যতিক্রম পদ্ধতিতে আদা চাষ করায় বিভিন্ন এলাকার মানুষ তার বাগান দেখতে আসছেন।
স্কুল শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক রুবেল (৩২) লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা টংভাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম বেজগ্রামের ইসাহাক আলী ছেলে। সে ওই এলাকার আলহাজ্ব সমসের উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। পাশাপাশি আলহাজ্ব সমসের উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, আদা পাইকারি ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। বাজারে দেশি আদার প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
আব্দুর রাজ্জাক রুবেল বলেন,প্রথমে বেলে দোআশ মাটি সংগ্রহ করে সেই মাটি ব্লিচিং পাউডার ও ডলোচুন দিয়ে পরিষ্কার করে নেয়া হয়। তারপর কিছু দিন ফেলে রেখে সেই মাটির সাথে গোবর, কাঠের গুড়া ও রাসানয়িক সার মিশ্রয় করে ১০-১২ দিন রাখা হয়। এরপর বস্তায় মাটি ভর্তি করে সুপারী গাছের ফাঁকে ফাঁকে রেখে আদার বীজ রোপন করা হয়। এক একর জমিতে প্রায় ৫ হাজার ৫ শত বস্তায় আদা চাষাবাদ করি।
তিনি আরও বলেন, সব মিলে প্রতি বস্তায় খরচ হবে প্রায় ৪০ টাকা। প্রতি বস্তায় ৭০০ গ্রাম থেকে ১২ গ্রাম পর্যন্ত আদার ফলন হতে পারে। এতে মোট ২ লক্ষ টাকা খরচের বিপরীতে প্রায় ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা আয় কলার সম্ভাবনা রয়েছে।
হাতীবান্ধা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন,শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক সুপারি বাগানের পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ করেছেন এটা ব্যতিক্রমী। সুপারি বাগানের আধা রোদ আধা ছায়ায় আদার খুব ভালো ফলন হয়। একই জমিতে অধিক ফসল হয়। কৃষকরা দ্বিগুণ লাভবান হয়।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন মিয়া বলেন, আমাদের কৃষি অফিস থেকে তাকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। আশা রাখছি তিনি আদা চাষে শতভাগ সফল ও লাভবান হবেন।
লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হামিদুর রহমান, বলেন,স্কুল শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক শিক্ষকতার পাশাপাশি বস্তায় আদা চাষ করে লাভবান হচ্ছে। শিক্ষকের আদা চাষের সফলতা দেখে অনেক চাষিরা আগ্রহ প্রকাশ করছেন । আশাকরি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পতিত জমি আর পড়ে থাকবে না। পাশাপাশি লালমনিরহাট জেলায় পতিত জমি গুলোতে বিভিন্ন ধরনের চাষবাস করার জন্য কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।