দিপক রায়, তারাগঞ্জ প্রতিনিধি :
পরিবারের কাছে পাওনা টাকা আদায় করতে না পেরে কবর খুরে মৃতদেহ উঠানোর চেষ্টা করেছেন এক পাওনাদার এক নারী।
কবর খোড়ার এক পর্যায়ে আশেপাশের লোকজন দেখে ফেলার পর ওই নারী বাড়িতে চলে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তপ্ত জনগণকে শান্ত করে এবং পাওনাদার ওই নারী আটক করে থানায় নিয়ে যায়। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের খিয়ারডাঙ্গা কবরস্থানে।
ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত ৭ জুন ব্রেইন স্ট্রোক জনিতে রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধন মারা যান হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের আদাহইন্না গ্রামের আব্দুল গফুরের স্ত্রী সাহেদা বেগম। সাহেদার কাছে বিভিন্ন সময় ধার বাবদ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাওনাদার রয়েছেন একই গ্রামের জোনাব আলীর স্ত্রী আছেনা বেগম।
সাহেদার মৃত্যুর পর তার পরিবারের লোকজন মৃত নারীর কাছে কেউ কোন পাওনাদার আছে কিনা খোঁজ করলেও কেউ সেদিন সাড়া দেয়নি। পরে স্থানীয় খিয়ারডাঙ্গা কবরস্থানে ইসলামী শরিয়ত মেনে কবর দেওয়া হয়।
কবর দেওয়ার পরের দিন সাহেদার পরিবারের লোকজনের সাথে পাওনা টাকার বিষয়ে কথা বলেন আছেনা বেগম।
পরিবারের লোকজন তাকে কিছুদিন অপেক্ষা করার অনুরোধ জানান। সোমবার আবারও আছেনা পাওনা টাকা চাইতে আছেনার পরিবারের কাছে যান। এসময় সাহেদার পরিবারের লোকজন আবারও তাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে বললে তর্কবিতর্কের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে আছেনা সেখান থেকে রাগ করে বের হয়ে বাড়িতে গিয়ে তার স্বামী জোনাব আলীকে সাথে নিয়ে সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে কবরস্থানে গিয়ে সাদের কবর খুড়তে থাকে। এসময় আশেপাশের লোকজন তাকে মৃত মানুষের কবর খুরতে দেখে বাধা দেয়। এতে আছেনা পিছু হটে স্বামীকে নিয়ে বাড়িতে চলে যায়। খবর পেয়ে সাহেদার পরিবারের লোকজন কবরস্থানে গিয়ে কবর খোড়া দেখে তারাগঞ্জ থানায় খবর দেয়।
খবর পেয়ে তারাগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত শেষে কবরটি ঢেকে দেওয়ার অনুমতি দিলে ধর্মীয় নিয়ম মেনে কবরে মাটি চাপা দেওয়া হয়।
এবিষয়ে জোনাব আলীর সাথে কথা বলতে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা না পেলেও কথা হয় তার স্ত্রী আছেনা বেগমের সাথে।
আছেনা বলেন, আমি সাহেদার সাথে অনেক আগে থেকেই টাকা দেওয়া নেওয়া করি। কয়েক মাস আগে সাহেদার বাড়িতে একটা কেস (মামলা) হওয়ার পর আমার কাছে জমির ধান দেওয়া বাবদ ৫০ হাজার টাকা নেয়। কথা ছিল টাকা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত ৬ মাস পরপর ৬ মন করে ধান দিবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত টাকাও পরিশোধ করেনি কোন ধান দেয়নি। এরপর আমার নামে ব্যাংকে লোন নেয় ৭০ হাজার টাকা। প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হয় সেই টাকার। প্রথম দুইটা কিস্তি পরিশোধ করলেও পরে আর কোন কিস্তি দেয়নি তারা। আজকেও সোমবার) কিস্তি আছে। এই কিস্তির জন্য আমার স্বামী আমাকে মারধর করছে প্রায়ই। আজকেও আমার স্বামী আমাকে মেরেছে। মার খেয়ে ওদের বাড়িতে গেছি টাকা চাইতে। কিন্তু ওরাও যখন আমাকে বের করে দেয় তখন আমি রাগ করেই এই ঘটনা ঘটিয়েছি।
তারাগঞ্জ থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ওই পাওনাদার নারীকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।