শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১৪ পূর্বাহ্ন

ডিমলায় গরুর শরীরে দেখা দিচ্ছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ, আতঙ্কে প্রান্তিক খামারি

ডিমলায় গরুর শরীরে দেখা দিচ্ছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ, আতঙ্কে প্রান্তিক খামারি

জামান মৃধা, ডিমলা (নীলফামারী):

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ বা এলএসডি রোগ। গত ১ মাসে উপজেলার ৫ থেকে ৬ হাজার গরু আক্রান্ত হয়েছে এ রোগে। এলএসডি রোগে আক্রান্ত হয়ে ৪ থেকে ৫ শতাধিক গরু ইতিমধ্যে মারা গেছে। ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে এ উপজেলায়। আর তাতে খামারি এবং প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা।

রোগটির বিষয়ে গরুর মালিক এবং খামারিদের ভাষ্য, শুরুতে গরুর সারা শরীরে বসন্তের মতো গুটি উঠছে। তারপর হাঁটু, গোড়ালি ও গলা ফুলে যায়। গলায় পানি জমে। জ্বর আর প্রচণ্ড ব্যথায় খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয়। অনেক সময় মুখ দিয়ে লা-লা পড়ে। কেউ কেউ অন্যান্য সুস্থ গরুকে এ রোগ থেকে রক্ষা করতে আক্রান্ত গরুকে মশারি দিয়ে আলাদা করে রাখছে। কিন্তু এর পরও সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। এদিকে খামারিদের অভিযোগ, প্রাণিসম্পদ অফিসের চিকিৎসকদের ডাকলে সাড়া দেন না। আর এলেও তাদের বড় অঙ্কের ফি দিতে হয়। নিরুপায় হয়ে তারা গ্রামের পশু চিকিৎসকদের মাধ্যমে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা করাচ্ছেন। আর গ্রাম্য চিকিৎসকেরা যে যার মতো ওষুধ প্রয়োগ করছেন। এতে অনেক ক্ষেত্রে বিপত্তিও ঘটছে। এ অবস্থায় ঋণ নিয়ে গরু কিনে অনেকে আবার দুশ্চিন্তায় আছেন। এমনও লক্ষ্য করা গেছে, অনেক পরিবারে ২/১টি গরুই একমাত্র সম্পদ। গরু লালন-পালনের পর বিক্রি করে অনেকে সংসারের কাজে লাগায়। মেয়ের বিয়েতে খরচ করে। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ দেয় আবার কেউবা দুধ বিক্রি করে নিত্যদিনের খরচ বহন করে। অনেকে আবার কিস্তির টাকা পরিশোধও করে। তাই রোগে গরুটি মারা গেলে পড়তে হয় মহাশঙ্কটে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত ২০ জুন সদর ইউনিয়নের কেরানীপাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র খামারি মনোয়ারা বেগমের দেড় লক্ষ টাকা মূল্যের দুটি গরু মারা গেছে। তিনি বলেন, তার চারটা গরুর মধ্যে দুইটি গরু এই রোগে মারা গেছে। আক্রান্ত গরুর চিকিৎসার পেছনে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বাকি ২টি সুস্থ গরু নিয়ে আমরা সবাই খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি!

পার্শ্ববর্তী গ্রামের শাহ আলম বলেন, এক মাসের মধ্যে তার আড়াই লাখ টাকা মূল্যের তিনটি গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজে মারা গেছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা করাতে উপজেলার পশু হাসপাতালের চিকিৎসকেরা প্রতিবার ভিজিট হিসাবে নিয়েছেন দুইহাজার টাকা। গরুর চিকিৎসা করাতে প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তারপরও বাঁচাতে পারেননি। ওই গরু হারানোর শোকে নিজেও এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। একই এলাকার আব্দুস সাত্তার, রফিকুল ইসলাম, ফজলুল হক, রশিদুলসহ ২০জন প্রান্তিক কৃষকের গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।

লাম্পি স্কিন ডিজিজ বা এলএসডি রোগ এখন এলাকার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকাবাসি বলছেন, প্রতি বছরই এই রোগে গরু মারা যাচ্ছে, কিন্তু রোগের প্রতিষেধক বা প্রতিকারে সরকারি উদ্যোগের কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এমনকি যারা ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের জন্য সহায়তার উদ্যোগও নেই। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। রোগটি দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। কারণ এটি অন্য জেলা গুলোতেও বিস্তার লাভ করতে পারে। এবং হতে পারে এ খাতের জন্য বড় ধরনের আঘাত। এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাম্পি স্কিন ডিজিজের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকলেও ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। আতঙ্কিত না হয়ে মশা-মাছি থেকে গরুকে নিরাপদ রাখতে হবে। গরুর শরীর ও পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এই বিষয়টি নিয়ে গরু খামারিদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। আর সরকারি প্রাণিসম্পদ বিভাগটি এ নিয়ে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সহায়তায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

 

উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মদন কুমার রায় বলেন, লাম্পিং স্ক্রিন এ রোগের সরাসরি কোনো প্রতিষেধক নেই। তবে ছাগলের বসন্ত রোগের প্রতিষেধক এ ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর। তাই ইতিমধ্যেই প্রতিষেধকটির প্রয়োগ শুরু হয়েছে।

 

তিনি আরও বলেন,প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্প করে এই রোগের ব্যাপারে সচেতন করে দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে আক্রান্ত গবাদিপশুকে আলাদা করে মশারির ভিতর রাখতে হবে।এছাড়া নিমপাতা ও খাবার সোডা বেশি বেশি খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT