বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৭ অপরাহ্ন

টাকা ছাড়া মিলে না চিকিৎসা সেবা!

টাকা ছাড়া মিলে না চিকিৎসা সেবা!

জামান মৃধা, ডিমলা (নীলফামারী)

ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ণ, চিকিৎসা কার্যে অবহেলা, অর্থ আদায়, কখনো রোগী ও রোগীর স্বজনদের সাথে রূঢ় আচরণ করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, রোগী বাণিজ্য করে ক্লিনিক ও প্যাথলজি থেকে নানা উপঢৌকন গ্রহণ করছেন চিকিৎসক- নার্স ও কর্মচারীগণ।

 

এ উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীকে ধাপে ধাপে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে তিন টাকা মূল্যের টিকিট ৫ টাকা ও জরুরি বিভাগে ৭ টাকা মূল্যের টিকিট ১০ টাকা করে নেওয়া হয়।

 

এছাড়াও রোগীদের বিনামূল্যের ড্রেসিং সেবা পাওয়ার কথা থাকলেও দিতে হয় ৫০ থেকে ২০০ টাকার উপরে। এভাবেই হাসপাতালে প্রবেশের পর থেকে শুরু হয় হয়রানি। হাসপাতালের প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার কারণে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং হাসপাতালের নার্স ও ওয়ার্ডবয়দের দ্বারা হয়রানির শিকার হন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদাসীনতার ফলে হাসপাতালটি এখন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার আতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে।

 

চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালের বাথরুম, বেসিন ও ফ্লোরের অবস্থা খুব অপরিচ্ছন্ন। ওয়ার্ডের ফ্লোর জীবাণু নাশক দিয়ে মুছা হয় না দীর্ঘদিন। শুধু ঝাড়ু দেয়া হয়। নোংরা পরিবেশের মধ্যে হাসপাতালের বেডে নাকে কাপড় দিয়ে থাকতে হয়।

চিকিৎসা সেবাগ্রহীতারা বলেন, বিনামূল্যে যেসব সেবা পাওয়ার কথা, টাকা না গুনলে এর সামান্য সেবাও এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেলে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় এমনটি হচ্ছে বলে অভিযোগ অনেকের।

বিশ্বস্তসূত্রে জানা যায়, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ ও জরুরী বিভাগে প্রতিদিন গড়ে পাঁচ শতাধিকের উপরে বিভিন্ন রোগী টিকিট কেটে চিকিৎসা সেবা নেন। এখানে বহির্বিভাগে রোগী দেখার জন্য সরকারিভাবে ”ফি নির্ধারণ” করা হয়েছে ৩ টাকা এবং জরুরী বিভাগের জন্য ৭ টাকা।

সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা কমপক্ষে ২০ জন রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, টিকিটের মূল্য হিসাবে কারও কাছ থেকে ১০, কারও কাছ থেকে ৭ আবার কখনো কারো কাছ থেকে ৫ টাকা নেওয়া হয়। এছাড়া যেসব রোগী দুর্ঘটনাসহ অন্যান্য কারণে ড্রেসিং করেছেন তাদের সবাইকে ৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। এছাড়া রুগীকে সেলাই বা প্লাস্টারের ধরনের ওপর নির্ভর করে টাকার পরিমাণ কম বেশি হয়।

গায়ে ফোঁড়া নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছেন ষাটোর্ধ্ব একজন বৃদ্ধ। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে ড্রেসিংরুমে পাঠানো হয়। সেখানে কর্তব্যরত অফিস সহায়ক আব্দুল হালিম ওই বৃদ্ধর নিকট থেকে ১০০ টাকা নেন।

পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জ গ্রাম থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ফজলুল হক তার পায়ের সেলাই কাটাতে ৫০ টাকা দিয়েছে।

তিনি বলেন, পায়ের ক্ষতস্থানের ড্রেসিং করতে পরপর দুই দিন আসতে হয়েছে। বিনামূল্যের ড্রেসিং করাতে ২০০ টাকার মত বকশিস দিতে হয়েছে। মূলত এখানে টাকা ছাড়া সরকারি সেবা পাওয়া যায় না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ড্রেসিং করার মূলত দায়িত্ব সিনিয়র স্টাফ নার্সদের। কিন্তু সেটি করে অফিস সহায়ক ও ওটিবয়গণ।

ড্রেসিং রুমে দায়িত্ব পালন করা অফিস সহায়ক আব্দুল হালিম ও ওটিবয় ফরিদুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, রোগীর লোকজন অথবা আত্মীয়-স্বজন খুশি হয়ে ৫০-১০০ টাকা দেন। কখনো কেউ জোর করে দেন। আমরা চেয়ে নেই না।

 

টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা জমশেদ আলী ও মামুন বলেন, খুচরায় ঝামেলা হয়! তাই টিকিটের মূল্য ৫ টাকা নেই। বিষয়টি টিএইচওসহ সকলেই জানেন। যাদের নিকট থেকে ৫ টাকার বেশি রাখা হয়, তাদের টিকিটের পিছনে লিখে দেই। পরে তাদের টাকা দিয়ে দেওয়া হয়। মামুন দাবী করে বলেন, অন্য সব উপজেলায় বহির্বিভাগে টিকিটের মূল্য দশ টাকা। সেই হিসাবে আমরা কম নিচ্ছি। এটা অনিয়ম কিনা জানতে চাইলে মামুন বললেন, আমি যোগদানের পর থেকেই দেখছি এভাবেই নিচ্ছে।

 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখানে সব চিকিৎসা সেবাই বিনামূল্যে পাওয়া যায়। কেবলমাত্র এক্স-রে, প্যাথোলজি, বহির্বিবিভাগ এবং জরুরী বিভাগের জন্য সরকার নির্ধারিত- ফি দিতে হয়।

 

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএইচও) ডাঃ মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। বহির্বিবিভাগে টিকিটের মূল্য তিন টাকার বেশি নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। কেউ যদি বেশি নিয়ে থাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ড্রেসিং সেবা কক্ষেও টাকা নিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT