শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:১০ পূর্বাহ্ন

কিশোরগঞ্জে অসুস্থ গবাদিপশু জবাই করে মাংস বিক্রি, ক্রেতাদের ভোগান্তি

কিশোরগঞ্জে অসুস্থ গবাদিপশু জবাই করে মাংস বিক্রি, ক্রেতাদের ভোগান্তি

কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় প্রাণীসম্পদ দপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই প্রতিনিয়ত হাটবাজারগুলোতে গরু ও ছাগল জবাই করে মাংস বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।

নিয়ম অনুযায়ী পশু জবাই করার আগে প্রাণীসম্পদ বিভাগের একজন চিকিৎসক পরীক্ষা নিরিক্ষা করে ছাড়পত্র এবং পশুর শরীরে সিল দেবেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের রোগ নির্নয়ে কোন ধরনের তদারকি না থাকার ফলে সাধারন ক্রেতারা ভেজালমুক্ত মাংস কেনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ব্যবসায়ীরা কম দামে অসুস্থ গরু ছাগল কিনে লোকচক্ষুর আড়ালে জবাই করে মাংস বিক্রি করছেন। আর এতে করে নিজের অজান্তেই অসুস্থ গরু ও ছাগলের মাংস খেয়ে একদিকে বিভিন্ন রোগে আক্লান্ত হচ্ছে মানুষ।

অপরদিকে কম দামে অসুস্থ গরু ছাগল কিনে নিয়ে বেশি দামে মাংস বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ছোট বড় মিলে ৫০টির বেশি হাটবাজার রয়েছে । এর মধ্যে সরকারীভাবে ইজারাকৃত হাটের সংখ্যা ২১ টি। এ সমস্ত হাটবাজারে চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ টির বেশি গরু ও প্রায় ৫০ থেকে ৬০ টি ছাগল জবাই করা হয়ে থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক হারে গবাদী পশুর লাম্পিস্কিন ডিজিজ ভাইরাস রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। এই রোগে আক্লান্ত অসুস্থ গরু গুলো ব্যবসায়ীরা গোপনে কম দামে কিনে উচ্চমুল্যে মাংস বিক্রি করছেন।

হাট বাজারগুলোতে প্রশাসনিক কোন অভিযান না থাকায় এবং প্রাণীসম্পদ দপ্তরের অবহেলার কারনে প্রতিনিয়ত প্রতারনার স্বীকার হচ্ছেন ভোক্তাগন।

গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে গিয়ে দেখা যায়, গরু ব্যবসায়ীরা গরু জবাই করে মাংস বিক্রি করছেন।

এসময় মাংস ব্যবসায়ী আব্দুল মালেকের কাছে গরু জবাই করার আগে গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছেন কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, কারা গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে সেটি তিনি জানেন না। তিনি বলেন, আমাদের হাটে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ টি গরুর মাংস বিক্রি হয় কেউ গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করায়না। তাছাড়া কেউ কোন দিন বলেনাই গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা আপনি প্রথম বললেন।

কিশোরগঞ্জ হাটে গিয়ে দেখা যায় , ছাগল ব্যবসায়ী আব্দুর রউফ চারটি ছাগল জবাই করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। এসময় ছাগলগুলো রোগাক্রান্ত কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ছাগলগুলো সম্পুর্ন সুস্থ। কিন্তু ছাগলগুলো দেখলে মনে হয় সেগুলা অসুস্থ । ছাগলগুলোর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন ছাগলের আবার কিসের পরীক্ষা।

হামিদুল ইসলাম নামে একজন ক্রেতা বলেন, আমি প্রতি সপ্তাহে মাংস কিনি। গরু জবাইয়ের আগে সেটি সুস্থ ছিল নাকি অসুস্থ তা আমরা জানিনা। বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব কার, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের , হাট ইজারা দারের নাকি প্রাণী সম্পদ বিভাগের সাধারন মানুষের তা অজানা।

কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রেনেট বাবু বলেন, প্রতিটি গবাদীপশু জবাই করার আগে প্রাণী সম্পদ দপ্তরের একজন ডাক্তার পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে গরু সুস্থ হয়ে থাকলে ছাড়পত্র প্রদান পূর্বক ব্যবসায়ীরা গরু ও ছাগল জবাই করবেন। গত ১০ বছরেও কোনদিন আমি গরু ছাগল পরীক্ষা করা দেখিনি। পরীক্ষা ছাড়া গরু ছাগল জবাই করে মাংস বিক্রি করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু প্রশাসনের কোন তৎপরতা না থাকায় আইন অমান্য করে অসাধু ব্যবসায়ীরা অসুস্থ গরু কম দামে কিনে জবাই করছে।

কিশোরগঞ্জ প্রাণীসম্পদ দপ্তরের সার্জন ডা: নাহিদ সুলতানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, গবাদী পশু জবাই করার আগে সেগুলা পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য অফিসে নিয়ে আসতে হবে। ব্যবসায়ীরা গবাদি পশু অফিসে নিয়ে না আসায় সেগুলো পরীক্ষা করা সম্ভব হয়না। তিনি আরো বলেন, অফিসে পর্যাপ্ত জনবল না থাকাও একটি কারণ।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা নুরুল আজিজের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, জবাইকৃত গরু ছাগলের মাংস পরীক্ষা নিরিক্ষা করার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন সেনেটারী ইনস্পেকটর রয়েছে এটি তাঁর দায়িত্ব। গবাদি পশু জবাইয়ের আগে আপনার দপ্তর থেকে একজন প্রাণী চিকিৎসকের মাধ্যমে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ছাড়পত্র ও পশুর গাঁয়ে সিল দেওয়ার বিধান রয়েছে কিনা জানতে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

এম.এফ/রংপুর টাইমস

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT