শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৩ পূর্বাহ্ন

দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তায় যত ভোগান্তি

দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তায় যত ভোগান্তি

জামান মৃধা, ডিমলা (নীলফামারী)

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় টেপাখরিবাড়ি ইউপি ভবন থেকে তিস্তা বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার কাঁচা মাটির রাস্তা।

 

 

শুষ্ক মৌসুমে রাস্তায় যেনতেনভাবে চলাচল করতে পারলেও বর্ষা মৌসুম রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটু সমান কাদা-পানির সৃষ্টি হয়।

 

 

এতে যানবাহনে-তো দূরের কথা হেটে চলাচলেও দুষ্কর হয়ে পড়ে। বৃষ্টির পানি ও মাটি মিশে কাদায় একাকার হয়ে যায় পুরো রাস্তা। এতে বিপাকে পড়েন ওই এলাকার কয়েক গ্রামের হাজারো মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে কাঁচা রাস্তাটিতে ইটের ছোঁয়া না লাগায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী। অথচ ওই সড়কের শেষ প্রান্তে রয়েছে একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, এতিমখানা এবং চোরাচালান প্রতিরোধে সীমান্তরক্ষী (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) বার্নির ঘাট বিজিবি ক্যাম্প। দীর্ঘদিনেও সড়কটি পাঁকা না হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

 

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ”ইউপি ভবন থেকে তিস্তা বাজার পর্যন্ত” প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিকল্প কোনো সড়কের ব্যবস্থা না থাকায় হাঁটু সমান কাদা মাঁড়িয়েই চলাচল করতে হয় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, বয়-বৃদ্ধসহ অন্য সবার।

বছরের শুষ্ক মৌসুমে সড়কে ধুলাবালি আর বর্ষা মৌসুমে কাঁদামাটি ভোগান্তির শিকার হতে হয় পথচারীদের। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এ রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হয় তাদের। এই এলাকার মানুষের আতংক ও ভয়ের আরেক নাম বৃষ্টি। বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জমে হাঁটু সমান কাঁদামাটি।

 

 

বর্ষা মৌসুমে এ রাস্তায় কোনো অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস, ভ্যান-রিকসা ঢোকে না। মোটরসাইকেল, সাইকেলে তো দূরে থাক, খালি পায়ে হেঁটে চলাচল করাও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বৃষ্টির দিনে গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনো যানবাহন ও অ্যাম্বুলেন্সও এখানে ঢুকতে চায় না। অনেক সময় কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে কাঁধে করে কর্দমাক্ত রাস্তা পার করতে হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা লিটন আহমেদ বলেন, আমাদের দুঃখ-কষ্ট, দুর্ভোগের কথা কেউ শুনে না! এই এলাকার মানুষের ভোগান্তির কথা বলে বোঝানো যাবে না, নিজ চোখে দেখতে হবে। আমরা ঠিকমতো হাটবাজারে যেতে পারি না। কৃষিপণ্য সময়মতো বিক্রি করতে পারি না। আমাদের ছেলেমেয়েরা কষ্ট করে স্কুল-কলেজে যায়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে জুতা-স্যান্ডেল হাতে নিয়ে রাস্তার কাদামাটি মাড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়। আর কত কাল এ কষ্ট করতে হবে কে জানে?

 

 

ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দা লুৎফর রহমান জানান, এলাকায় প্রচুর কৃষি পণ্য উৎপাদন হয়। কিন্তু রাস্তার বেহাল দশার কারণে কৃষকেরা সময়মতো কৃষি ফসল বাজারজাত করতে পারেন না। ফলে কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হতে হয় তাদের। সামান্য বৃষ্টি হতে না হতেই রাস্তার পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে কি করে চলাচল করব আমরা তা কিছুই বুঝে উঠতে পারিনা। এখন শুরু হয়েছে ভুট্টার ভরা মৌসুম। এখানকার প্রধান কৃষি পণ্য ভুট্টা। কৃষক পর্যায়ে ভুট্টার ন্যায্য মূল্য পেতে এমন পরিস্থিতির শিকার হয়ে তাদের যেতে হচ্ছে পার্শ্ববর্তী শুটিবাড়ি বাজারে। জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোনো সুফল হয়নি। তাদের কাছে অনুরোধ আমাদের এই রাস্তার দিকে একটু নজর দেওয়ার জন্য। এছাড়া তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের মানুষজনও চলাচল করে এই রাস্তা দিয়ে।

জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য লিখন হোসেন বলেন, রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে কাঁচা। সামান্য বৃষ্টি হলে রাস্তাটি চলাচলের জন্য অযোগ্য হয়ে পড়ে। ফলে সর্বসাধারণের জন্য দুর্ভোগে পরিণত হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্যকে জানানো হয়েছে। আশা করি, খু্ব তাড়াতাড়ি এর একটা সমাধান হবে।

টেপাখরিবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. রবিউল ইসলাম শাহীন বলেন, স্থানীয় মানুষজনের জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে রাস্তাটি পাকা করা প্রয়োজন। আমি ইতিমধ্যে এমপি মহোদয় ও উপজেলা প্রকৌশলীকে বলেছি বলেছি। তেনারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।

 

উপজেলা প্রকৌশলী মো. শফিউল ইসলাম বলেন, রাস্তাটি প্রকল্প আকারে উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলেই দরপত্র আহবান করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT