জেলা প্রতিনিধি,লালমিনরহাট।।
লালমনিরহাট জেলা কারাগারে এই প্রথম দুই পরিবারের সম্মতিক্রমে ৮ লাখ টাকা দেন মোহরানা ধর্য করে ধর্ষনের শিকার ১৭ বছরের নাবালিকার সঙ্গে ধর্ষন মামলার আসামি রকিবুজ্জামান রকিব (২৬) সাথে বিয়ে দিয়েছেন লালমনিরহাট কারা কর্তৃপক্ষ। এমন ঘটনায় লালমনিরহাট জেলা জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় লালমনিরহাট জেল সুপার উমর ফারুক বলেন, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক লালমনিরহাট জেলা কারাগারে এই প্রথম দুই পরিবারের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে নিকাহ্ রেজিস্টারের মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিয়ের ১৩ দিন পেরিয়ে গেলেও আপিল বিভাগ থেকে আসামী মুক্তির নির্দেশের কাগজপত্র এখনো জেলা কারাগারে আসেনি। কাগজপত্র এলেই তাকে মুক্তি দেওয়া হবে।
এর আগে গত রোববার (২৯ নভেম্বর) বিকেলে লালমনিরহাট জেলা কারাগারে দুই পরিবারের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ভুক্তভোগীর সঙ্গে আসামির বিয়ে সম্পন্ন করেন লালমনিরহাট জেল সুপার।
এদিকে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হওয়ায় আসামীকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। গত সোমবার (৪ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৬ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ধর্ষণের শিকার ওই নাবালিকা ও আসামী পক্ষে বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় দুর্গাপুর এলাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৩ জুলাই ওই কিশোরীকে অপহরণ করে একই এলাকার রকিবুজ্জামান রকিব (২৬) নামে এক যুবক। পরে ২০২৩ সালের ৮ এপ্রিল অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে রকিবের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। একইদিন অপহরণের শিকার হওয়া কিশোরীকে উদ্ধার করে এবং রকিবকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরে মেডিকেল পরীক্ষায় ওই মেয়ে গর্ভবতী বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে ওই গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। মামলায় গত জুন মাসে আসামিকে জামিন দেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে আসামি রকিবুজ্জামান রকিবের জামিন স্থগিত করে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগ পাঠিয়ে দেন চেম্বার আদালত। এর মধ্যে জামিন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করে আসামিপক্ষও।
শুনানিতে আসামিপক্ষ লিখিতভাবে আদালতকে জানান, ভুক্তভোগীর সঙ্গে আসামির বিয়ের ব্যবস্থা করতে উভয়পক্ষ রাজি হয়েছেন। এরপর ভুক্তভোগীকে বিয়ের শর্তে আসামির জামিন প্রার্থনা করা হয়।
এদিকে, শুনানিতে উপস্থিত থাকা ভুক্তভোগীর বাবা আপিল বিভাগকে জানান, তার মেয়েও বিয়ে করতে আগ্রহী। পরে শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ১৫ দিনের মধ্যে লালমনিরহাটের কারা কর্তৃপক্ষকে বিয়ের আয়োজন করতে নির্দেশ দেন। আদালতের সেই নির্দেশ মোতাবেক গত ২৯ নভেম্বর বিকেলে লালমনিরহাট জেলা কারাগারে দুই পরিবারের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ভুক্তভোগীর সঙ্গে আসামির বিয়ে সম্পন্ন করেন জেল সুপার উমর ফারুক। পরে সোমবার (৪ ডিসেম্বর) কারাগারে থাকা আসামির জামিন বহাল রেখে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ভুক্তভোগীর বাবা বলেন,আমার ছেলে ভুল করেছে তাই মেয়ের পরিবারের সাথে বসে আপস মীমাংসা করে ছেলে ও মেয়ের বিয়ে দেওয়ার সম্মত হই। আদালত যে রায় দিয়েছেন তাতেই আমরা খুশি।
লালমনিরহাট জেলা কাজী সমিতির সভাপতি কাজী আমজাদ হুসাইন সরকার বলেন, আদালতের আদেশে কারাগারে ৮ লাখ টাকা দেন মোহরানা ধর্য করে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে। এসময় দুই পরিবারের অভিভাবকগণ উপস্থিত ছিলেন।