বৃহস্পতিবার, ০৩ Jul ২০২৫, ০৪:৪০ অপরাহ্ন

ডিমলায় এনসিপির পরিচিতি সভায় ‘জুলাই আন্দোলন’ বিরোধী আওয়ামী লীগ নেতা

ডিমলায় এনসিপির পরিচিতি সভায় ‘জুলাই আন্দোলন’ বিরোধী আওয়ামী লীগ নেতা

ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি।

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক পরিচিতি সভায় ‘জুলাই আন্দোলন’ বিরোধী হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা ও খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে অতিথির আসনে বসানো নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

 

গত শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে উপজেলার বিজয় চত্বরে আয়োজিত এনসিপির এই পরিচিতি সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সুধীজনদের পাশাপাশি খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এই অনুষ্ঠানের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

 

জাহাঙ্গীর আলম সাবেক সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকারের ভাগ্নে এবং তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহারের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেনকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী রবিউল ইসলাম লিথনের নির্বাচনী সভায় হামলা ও হয়রানির ঘটনাও স্থানীয়ভাবে বহুল আলোচিত।

 

২০২৩ সালের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জাহাঙ্গীর বিরোধী প্রার্থীদের ওপর হামলা ও ভোটকেন্দ্র দখলের মাধ্যমে বিজয়ী হয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে ২০২৪ সালে তার নেতৃত্বে ডিমলা উপজেলায় ‘জুলাই আন্দোলন’-এর সময় বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও ভোটে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগও উঠেছে। এসব ঘটনায় তিনি একাধিক মামলার আসামি।

 

খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন অভিযোগ করেন, তাকে সরকারি যন্ত্র, বিশেষ করে পুলিং ও প্রিজাইডিং অফিসারদের ব্যবহার করে ভোট কারচুপির মাধ্যমে হারানো হয়েছে। তিনি ২০২৩ সালের ইউপি নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একই কৌশল অবলম্বনের অভিযোগ তোলেন।

”জুলাই আন্দোলন” স্মৃতি জড়িত রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীরের উপস্থিতিকে অনেকে এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে দেখছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলা পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এই ব্যক্তি আমাদের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। তার উপস্থিতি আমাদের আদর্শিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি এভাবে ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসিত করে, তাহলে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দায়বদ্ধ থাকব।”

এনসিপির নীলফামারী জেলা কমিটির অন্যতম সদস্য এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক রাশেদুজ্জামান রাশেদ জানান, জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হলেও ২০২৩ সালে তিনি দলটির সব পদ-পদবি থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি আরও বলেন, “২০২৪ সালের ৪ আগস্টের আন্দোলনে তিনি বিরোধিতা করেছিলেন কি না, সেটা আমি নিশ্চিত না। আমি শুনেছি, তিনি নাকি আন্দোলনে সহযোগিতাও করেছিলেন। সে কারণেই তাকে এনসিপিতে নেওয়া হয়েছে।”

তবে জাহাঙ্গীর আলম বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সরাসরি নেতৃত্ব দিয়েছেন বা বিরোধিতা করেছেন কিনা, তা নিয়েও বিভ্রান্তি রয়েছে। আন্দোলনকালে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপর তার দ্বারা চালানো পুলিশি হয়রানির কথাও বিভিন্ন সূত্রে উঠে এসেছে।

এই বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য জানতে একাধিকবার তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিষয়টি ঘিরে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ লিখেছেন, “যারা অতীতে বাধা দিয়েছে, তারাই আজ বিকল্প রাজনীতিতে জায়গা করে নিচ্ছে। এটা রাজনৈতিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়।” অন্য এক নেটিজেন মন্তব্য করেছেন, “ফ্যাসিস্টদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের মানে হলো আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের রক্তের প্রতি অবমাননা।”

অন্যদিকে, হাফেজ সুজন ইসলাম ফেসবুকে লেখেন, “আমি জুলাই আন্দোলনে ছিলাম। দেশের প্রয়োজনে আবারও আন্দোলনে থাকব। আমি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কমিটি’-তে ছিলাম। একসময় শিবির করতাম, বর্তমানে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছি এবং থাকব।”

উল্লেখ্য, উক্ত কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন জাতীয় পার্টির নেতা মোশারফ হোসেন মিন্টু। এছাড়াও কমিটিতে রয়েছেন জাতীয় পার্টির ডিমলা উপজেলার সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এর উপজেলা সভাপতি জাকারিয়া হোসেন রাজু, আওয়ামী লীগ কর্মী রবিউল ইসলাম শুকারু এবং জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্ট হাফেজ সুজন ইসলাম।

 

তবে এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হলে জাকারিয়া হোসেন রাজু নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুকে) লেখেন, “আমি বাংলাদেশ ন্যাপ-এর ডিমলা উপজেলা শাখার সভাপতি ছিলাম, আছি এবং থাকব। দয়া করে কেউ বিভ্রান্তিকর তথ্য বা গুজব ছড়াবেন না।”

 

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT