শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন

ডালিয়া পওর বিভাগের কোটি টাকা মূল্যের জায়গা বেহাত, চেয়ারম্যানের মার্কেট নির্মাণ!

ডালিয়া পওর বিভাগের কোটি টাকা মূল্যের জায়গা বেহাত, চেয়ারম্যানের মার্কেট নির্মাণ!

জামান মৃধা, ডিমলা (নীলফামারী)

দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প ডালিয়া পওর বিভাগে বেদখল হয়ে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি। ভূমিদস্য এ চক্রটি সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে পাঁকা মার্কেট নির্মাণ করেছে। শুধু তাই নয়, দখল করা জমিতে মার্কেট নির্মাণ করে নিজেরা ব্যবসার পাশাপাশি দোকান ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়াও মার্কেটের দোকান সহজ সরল মানুষের কাছে বিক্রিও করছে। এতে সরকার প্রতি বছর কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাউবোর জমি উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরবতা পালন করছে। যা জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি করছে।

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের চাপানির হাটে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সামনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগটি উঠেছে ঝুনাগাছ চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী একরামুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নে চাপানির হাট একটি আদি ও ঐতিহ্যবাহী হাট। এ হাটে ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা ছাড়াও হাট-বাজারের জায়গা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেশ কিছু জায়গা-জমি রয়েছে। হাটের কেন্দ্রস্থল এবং কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের সামনে পাউবোর এসব জায়গা দখল করে গত কয়েক মাস আগে থেকে গড়ে তোলা হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানাধীন মার্কেট। এই মার্কেটের পাঁচটি বড় সাইজের দোকান ইতিমধ্যে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। নেওয়া হয়েছে মোটা অংকের জামানত। এছাড়া বড় সাইজের আরো পাঁচটি দোকান বর্তমানে নির্মানাধীন রয়েছে। এছাড়াও নির্মাণাধীন মার্কেটের সামনে ডালিয়া-পাগলাপীর মহাসড়ক। মহাসড়কের পশ্চিম পার্শ্বে ইতিপূর্বে নির্মাণ করেছে ৩০-৩৫টি দোকান ঘর। নিয়মিত যার মাসিক ভাড়া উত্তোলন করে ৪০/৫০ হাজার টাকা। সম্পূর্ণ টাকা চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরীর ব্যক্তিগত তহবিলে জমা হয়। অথচ পাউবো কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর এই সকল জমির খাজনা বাবদ লক্ষ লক্ষ টাকা সরকারি রাজস্ব খাতে জমা দিয়ে আসছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে দিন দিন স্থানীয় প্রভাবশালীরা এভাবেই গড়ে তুলছেন ভবন, ইমারত, দোকানপাট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকেই জানান, যারা এসব পাঁকা ইমারত তৈরি করছেন তারা সকলেই স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ সকল জায়গা-জমি দখল করে ভবন ও দোকানপাট নির্মাণ করে যাচ্ছে। রহস্যজনক কারণে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন এগুলো দেখেও দেখেনা। শুনেও শুনে না। দ্রুত এসব অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সরকারি জায়গা দখল মুক্ত করা প্রযোজন বলে মনে করছেন তারা। এ বিষয়ে দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয়রা।

এই এলাকায় পাউবোর জায়গায় অস্থায়ীভাবে বসবাসকারীদের অভিযোগ, তারা দীর্ঘদিন ধরে পাউবোর জায়গায় অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে বসবাস অথবা ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছেন। তবে, তারা পাউবোর জায়গায় স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করার সাহস পাননি। কিন্তু এলাকার প্রভাবশালী ও ইউপি চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে পাউবোর জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছেন। পাউবো কর্তৃপক্ষও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। এই অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে অন্যরাও পাউবোর জায়গা দখল করে পাঁকা স্থাপনা নির্মাণ শুরু করবে বলেও জানান তারা।

ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান একরামুল হক চৌধুরী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় অনেকেই স্থাপনা তৈরি করেছে আমিও করেছি। তাতে দোষের তো কিছু নাই। আর আপনাদের যত মাথা ব্যাথা।

নির্বাহী প্রকৌশলী পওর ডালিয়া নীলফামারীর মো. আসফাউদদৌলা বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য ইতিমধ্যে আমরা নোটিশ করেছি। এরমধ্যে উনারা ভেঙ্গে না নিলে, উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করব। পাউবোর জায়গায় অবৈধ দখলদারিত্বের কোন সুযোগ নেই।

পাউবো’র উত্তারঞ্চল প্রধান প্রকৌশলী মো. মাহবুবর রহমান বলেন, পাউবোর এ সকল জায়গা কাউকে লিজ দেওয়া হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা তৈরি করার কোনো সুযোগ নেই। যারাই অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেছে তাদের তালিকা তৈরি করে অচিরেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT