জামান মৃধা, ডিমলা (নীলফামারী):)
[নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় বালাপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সুন্দরখাতা গ্রামে জলাশয়ের উপর অপরিকল্পিত ভাবে ৩৮ লাখ ৫৩২ টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ এলাকাবাসীর কোন কাজে আসছে না। ব্রিজের দুই পাশে রাস্তা নেই তবু নির্মাণ করা হয়েছে ব্রিজটি।
ব্রিজের এক পাশে সংযোগ রাস্তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। কেন বা কার স্বার্থে এই ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সচেতন মহলসহ সুধীমহলে ] (এই লেখাগুলো বড় করে হবে)
অভিযোগ উঠেছে, ডিমলা উপজেলা প্রকৌশল (এলজিইডি) অফিসের সার্ভেয়ার শাকিল হোসেন তার গ্রামের বাড়ির পাশের মাঠ থেকে ফসল আনা-নেওয়ার সুবিধার জন্য সরকারি খরচে ব্রিজটি নির্মাণ করেছেন। তিনি ওই গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মো. নুরু মিয়ার ছেলে।
সাম্প্রতিক সময়ে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে দক্ষিণ সুন্দরখাতা গ্রামে সার্ভেয়ার শাকিলের বাড়ির পশ্চিম পাশে জলাশয়ের উপর ১৫ মিঃ দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩৮ লাখ ৫৩২ টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুন্দরখাতা গ্রামের পশ্চিমপাশে বিস্তৃত ফসলের মাঠ ও জলাশয়। জলাশয়ের যে অংশে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে তার দুই পাশে কোনো রাস্তা বা সংযোগ সড়কের অস্তিত্ব নেই। স্থানীয় লোকজন বলছেন সেতুর দুই পাশে রাস্তা তৈরি হবে। কিন্তু সেই রাস্তা কবে হবে এবং কেন হবে তারা কেউ জানেন না? স্থানীয় অনেকেই আবার বলছেন এ ব্রিজটি কোন কাজেই আসবে না। শুধুমাত্র একজনকে খুশি করতে সরকারের লাখ লাখ টাকা জলে ফেলা হয়েছে।
ব্রিজটির এক পাশে বসতবাড়ি থাকলেও অন্য পাশে বিশাল ফসলের মাঠ। সামনে এক কিলোমিটারের মধ্যে নেই বসত বাড়ি। এছাড়া রাস্তার কোন অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই নেই কোন জনসাধারণের চলাচল। ব্রিজটির ২০০ মিটার পূর্বে সুন্দরখাতা-ডিমলা পাকা সড়ক, এক কিলোমিটার দক্ষিণে মাইজালির ডাংগা সড়ক। আধা কিলোমিটার উত্তরে খোকশার ঘাট ব্রীজ ও পাকা সড়ক। এক কিলোমিটার সামনে বুড়িতিস্তা নদী, বাঁধ ও পাকা রাস্তা। যা খোকশার ঘাট ব্রীজের সংযোগ রাস্তার সাথে মিশে গেছে। নদীর ওই পাড়ে ডোমার উপজেলা।
স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের অভিযোগ, এই ইউনিয়নের একাধিক জায়গার বিভিন্ন স্থানে একাধিক সেতুর প্রয়োজন। অথচ আশপাশের রাস্তা নেই, বসতবাড়িও নেই এমন জায়গায় এই ব্রিজ নির্মাণ হয়েছে! জনস্বার্থ ব্যাতিরেখে কোনও প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে ধরে নিতে হবে সেখানে দুর্নীতির উদ্দেশ্য রয়েছে? কারো ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে এই অপ্রয়োজনীয় সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।
সুন্দর খাতা গ্রামের বাসিন্দা আফসার আলী বলেন, রাস্তা ও জনবসতি না থাকায় সেতুটি নির্মাণের শুরুতে কাজ বন্ধ করে নির্মানসামগ্রীর সব মালামাল ফেরত নিয়ে যায় অফিসের লোকজন। পরে শুনেছি অনেক তদবিরের পর আবার কাজ শুরু হয়।
মধ্য সুন্দরখাতা গ্রামের ইদ্রিস আলী বলেন, মানুষজন নয়, গরু-মহিষ পারাপারের জন্য এই সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। আগে দেখতাম সড়ক নির্মাণ করে তারপর ব্রিজ বা কালভার্ট হতো। এ ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টোটা।
একই গ্রামের হযরত আলীসহ বেশ কয়েকজন বলেন, যেখানে দরকার সেখানে সেতু নির্মাণ না করে ফাঁকা মাঠে করা হয়েছে। এটা হাস্যকর! সেতু এলাকায় কোনও বসতভিটা নেই। কোন মানুষও চলাচল করে না। অথচ পাশের এই গ্রামে সহস্রাধিক মানুষের বাস। গ্রামের একমাত্র সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে সড়কটি হাঁটু পানির নীচে থাকে। কালভার্ট না থাকায় বৃষ্টির পানির চাপে বারবার ভেঙ্গে যায় সড়কটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সার্ভেয়ার শাকিল হোসেন বলেন, সরকারি বরাদ্দের অর্থ যাতে ফেরৎ না যায় সেজন্য ওই স্থানে ব্রিজটি দেওয়া হয়েছে। এখন রাস্তা নেই, ভবিষ্যতে হবে। নিজের পরিবারের সুবিধার জন্য সেতু নির্মাণ করেছেন কি না জানতে চাইলে বলেন, বরাদ্দ অনুযায়ী সে সময় অন্য কোথাও জায়গা খুজে পাইনি। তাছাড়া কাজ করতে গেলে ভুলত্রুটি হতেই পারে।
ডিমলা উপজেলা প্রকৌশলী শফিউল ইসলাম বলেন, আমি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে ছিলাম। বিষয়টি আমার জানা নেই। তারপরও রাস্তা ছাড়া কী কারণে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে।