শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন

তার খেয়াল-খুশি মতো বিদ্যালয়ে আসেন শিক্ষক

তার খেয়াল-খুশি মতো বিদ্যালয়ে আসেন শিক্ষক

জামান মৃধা, ডিমলা (নীলফামারী)

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় নিজের খেয়াল-খুশি মতো বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এছাড়া তিনি চলতি শিক্ষাবর্ষে বিদ্যালয়ে ক্লাস নিয়েছেন হাতে গুনামাত্র কয়েকদিন।

এ ঘটনাটি ঘটেছে ডিমলা সদর ইউনিয়নের সরদারহাট সরকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফয়জুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে এসব কর্মকাণ্ড করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দাবী, এ বিষয়ে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মৌখিকভাবে বলেও তার কোন সুরাহা হয়নি।

অভিভাবকসহ এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিদ্যালয়ে যথাসময়ে উপস্থিত হওয়ার নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেন না ওই শিক্ষক। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে নিজের খেয়াল-খুশি মতো স্কুলে আসেন যান। কখনো স্কুলে আসলেও ঠিকমত কোন ক্লাস করান না তিনি। চতুর্থ শ্রেণীর পড়ুয়া রাবেয়া আক্তার বলেন, স্যার আমাদের একদিন ক্লাস নিয়েছে আর কোনোদিন ক্লাস নেয়নি।

আমাদের অন্য স্যার ম্যাডামরা ক্লাস নেন কিন্তু উনি নেন না। কেন নেন না তা জানি না! নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ক্লাস ফোরে মাত্র একদিন ইংরেজি ক্লাস নিয়েছেন তিনি। বাকি দিনগুলো স্কুলে আসলে আমাদের ক্লাস করাতে আসেনি। তিনি স্কুলে আসেন-চলে যান আবার আসেন। কোন কোন দিন আসেন না। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া সূর্য ভানু বলেন, ফয়জুর রহমান স্যার আমাদের স্কুলে ঠিকমতো আসে না এবং আমাদের ক্লাস নেয় না। রুটিনে স্যারের নাম আছে, তিনি আমাদের ইংরেজি ক্লাস নেবেন তবুও তিনি ইংরেজি ক্লাস নেন না। আমরা তাকে অনেক জোড় করেছি ক্লাস নেওয়ার জন্য। স্যার ক্লাস নিতে বললেও তিনি ক্লাস নেন না। মুস্তাকিম নামে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলেন, রুটিনে স্যারের ক্লাস থাকলেও আমাদের ক্লাসে আসেন না। কিন্তু স্যার স্কুলে আসেন আবার খেয়াল খুশিমতো চলে যান যখন ইচ্ছে হয়। স্থানীয় অধিবাসী ও তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া ফিজিয়ার মা বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত ফয়জুল আলম স্কুলে আসেন না। আমি এর প্রতিকার চাই। তিনি যেন পুরোপুরি ভাবে ক্লাস আসেন এবং শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান করান। এভাবে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীরা বই বিমুখ হয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক ফয়জুর রহমান বলেন, আমার স্কুলে আপনাকে পাঠিয়েছে কে? এটা বলেন তো আগে! আমাকে দেখার জন্য স্টাফ আছে! আমার কর্তৃপক্ষ আছে! আমি নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসি কিনা সেই কৈফিয়ত কি আমি আপনাকে দিব? এই বিদ্যালয়ের অনেকেই নিয়মিত আসেন-না তাদেরকেও বলেন? শুধু আমাকে বলছেন কেন? বলতে বলতে তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেহানা জামান বলেন, মৌখিকভাবে একাধিকবার জানিয়েও কোনো সমাধান পায়নি। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে তিনি গাফিলতি করেন। পরে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা ফিরোজুল আলম বলেন, ইতিপূর্বে নিয়মিত পাঠদান না করার কারণে তাকে শোকজ করা হয়েছিল। উনি পরিবর্তন না হলে আগামীতে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নূর মোহাম্মদ আলম বলেন, দায়িত্বে অবহেলার কোন সুযোগ নেই। খোঁজ নিয়ে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নীলফামারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ এম শাহজাহান সিদ্দিক বলেন, দায়িত্ব অবহেলার কোন সুযোগ নাই। যদি আমার কাছে এ ধরনের কোন অভিযোগ আসে একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে তার যে শাস্তি সে পাবে। এটা আমি নিশ্চিত করবো।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT