শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৪০ অপরাহ্ন

টাকা দিলেই মিটার ফিরিয়ে দিতে চায় চোর!

টাকা দিলেই মিটার ফিরিয়ে দিতে চায় চোর!

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:

 

লালমনিরহাটে এক রাতেই ৮টি বিদ্যুতের মিটার চুরির ঘটনা ঘটেছে। রাতের অন্ধকারে বিদ্যুতের মিটার চুরি করে সেই স্থানে ঝুলিয়ে দেওয়া একটি কাগজে লেখা ‘মিটার পাবে” এরপর নিচে জুড়ে দেওয়া হয়েছে মুঠোফোন নম্বর। পরে ওই নম্বরে বিকাশের মাধ্যমে চাহিদামতো টাকা পাঠানো হলেই চুরি যাওয়া বিদ্যুতের মিটারটি আবার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকদের মিটার চুরি করে এভাবেই চাঁদা আদায় করে যাচ্ছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে ভুক্তভোগি গ্রাহকরা প্রতিকার চেয়ে লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম’র নিকট বিষয়টি অবগত করেন। এর আগে মঙ্গলবার রাতে সদর উপজেলার গোকুন্ডা, বড়বাড়ি ও পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নে এই চুরির ঘটনা ঘটে।

লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের হিসাব অনুযায়ী, গত ১ মাসে প্রায় ২শত গ্রাহকের মিটার চুরি হয়েছে। পরে মিটারের মালিক ওই নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করে টাকা দিয়ে আবার মিটার ফেরত পেয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে গোকুন্ডা, বড়বাড়ি ও পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কের বড়বাড়ি থেকে মুস্তফিহাট পর্যন্ত এলাকার গোকুন্ডা ইউনিয়নের মোঃ আব্দুস সালাম হাসু, পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের মোঃ আব্দুল জব্বার মন্ডল, মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের মোঃ মাহাবুর রহমান, বড়বাড়ি ইউনিয়নের মোজাম্মেল হক, গোকুন্ডা ইউনিয়নের মোঃ মমিনুল ইসলাম পাটোয়ারী, গোকুন্ডা ইউনিয়নের হেমন্ত কুমার রায়সহ ৮ রাইসমিল, চাতাল ও বিভিন্ন ব্যাবসায়ীক প্রতিষ্ঠান থেকে বৈদ্যুতিক মিটার চুরি করা হয়। চুরি হওয়া প্রতিটি মিটারের স্থানেই একটি কাগজে বিকাশ নম্বর ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত মিটারের মালিকেরা পরদিন সকালে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

গোকুন্ডা ইউনিয়নের মুস্তফফী পন্ডিতটারী গ্রামের রাইসমিল মালিক মোঃ মমিনুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, ‘আমার মিটার চুরির পর সকালে সেখানে একটি কাগজে লেখা ছিল “মিটার পাবে” তারপর একটি মোবাইল নম্বর ছিল।

পরে তার বিদ্যুতের মিটার চুরির বিষয়টি লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম মোঃ আব্দুল হালিমের নিকট জানালে তিনি থানায় অভিযোগ দেয়ার কথা বলেন এবং জানান থানায় জানানোর পর আপনাদের মিটারসহ বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হবে। আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর তার নিকট অভিযোগের কপি দিলে তিনি তাকে ৮হাজার ৫শত টাকা জমা দিয়ে মিটার নিতে বলেন। বিদ্যুৎ অফিসেই যদি আমাকে এতো টাকা দিয়ে মিটার নিতে তবে তিনি আমাকে আগে এ কথা বলেননি কেন.? তাহলে আমি চোরের কথামত তাদের বিকাশ নম্বরে ৪হাজার টাকা দিয়ে তাদের কাছেই মিটার ফেরত নিতাম।

এদিকে থানায় অভিযোগ দেয়ার খবর পেয়ে দুর্বৃত্তরা আমাকে মুঠোফোনে হুমকি দিচ্ছে। উপায়ন্তর না পেয়ে ক্ষতির ভয়ে তাদেরকে চার হাজার টাকা দিয়ে মিটার ফেরত নেয়ার কথা দেই।একই ইউনিয়নের আরও তিন গ্রাহক এভাবে টাকা দিয়ে চুরি হওয়া মিটার ফেরত নেবেন বলেও তিনি জানান।

গোকুন্ডা ইউনিয়নের চালকল মালিক মোঃ আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে থ্রি ফেজের একটি শিল্প মিটার পেতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। দুদিন আগে আমার চালকল থেকে একটি শিল্প মিটার চুরি হয়। বিষয়টি থানায় অবগত করা হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুলিশের কোন সহযোগিতা পাইনি। যদিও অভিযোগপত্রে চোর সিন্ডিকেটের দুটি মোবাইল নম্বর দেয়া হয়েছিল।

লালমনিরহাট পল্লী বিদুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চালকল, করাতকল, ইটভাটা কিংবা গভীর নলকূপ, যেখানে বিদ্যুৎ বেশি লাগে, সেখানে ‘থ্রি ফেজের মিটার ব্যবহার করা হয়। লালমনিরহাট সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের শিল্প মিটার দেয়া আছে। এর মধ্যে গত এক মাসে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১৫ থেকে ২০টি শিল্প মিটার চুরি হয়েছে। পরে গ্রাহকের মধ্যে অনেকেই টাকা দিয়ে মিটরগুলো ফেরত এনেছেন। তবে চুরির পর মিটারগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাই বিদ্যুৎ অফিস থেকে পরে গ্রাহকদের বিনা মূল্যে মিটার সরবরাহ করা হয়েছে।

বড়বাড়ি ইউনিয়নের আইরখামার ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক জানান, যেদিন আমাদের বিদ্যুতের মিটার চুরি হয় সেদিন ৪ থেকে ৫ বার লোডশেডিং হয়েছিল। আর ওইদিন রাতেই এক যোগে মিটার গুলো চুরি হয়। এই চোর সিন্ডিকেটের সাথে খুব সম্ভবত বিদ্যুৎ অফিসের কোন কর্মকর্তা অথবা কর্মচারীর যোগসাজস রয়েছে। তা নাহলে চোর সিন্ডিকেট কিভাবে জানবে সেদিন লোডশেডিং হবে? আর বিদ্যুৎ সম্পর্কে ধারনা না থাকলে সাধারন কোন মানুষের পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব নয়।

লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মোঃ আব্দুল হালিম বলেন, চুরির পর বিকাশ নম্বরে টাকা আদায় করে মিটার ফেরতের ঘটনা শুধু লালমনিরহাটেই নয়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় একটি চক্র এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে চলছে। প্রতিটি মিটারের মূল্য ১৩ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। তবে গ্রাহকেরা টাকা দিয়ে মিটারগুলো ফেরত আনলেও সেটা আর প্রতিস্থাপন করা যায় না। তাই গ্রাহকদের নিকট থকে ৮ হাজার ৫শত টাকা নিয়ে মিটার দেয়া হচ্ছে। যদিও মিটারের মুল্য ১৫ হাজার টাকা। এতে সামগ্রিকভাবে গ্রাহক ও পল্লী বিদুৎ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ওই নম্বরগুলো পুলিশের কাছে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, গতকাল বুধবার কয়েকজন ব্যবসায়ী তাঁদের মিটার চুরির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। চুরির পর কাগজে লিখে দেওয়া মুঠোফোন নম্বরের সূত্র ধরে এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। সেই সঙ্গে চক্রটিকে আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে।

এম.এফ/রংপুর টাইমস

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT