শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৩ পূর্বাহ্ন

ইরিবোরো চাষের ধুম সার-শ্রমিকের চড়াদামে দিশাহারা চাষিরা

ইরিবোরো চাষের ধুম সার-শ্রমিকের চড়াদামে দিশাহারা চাষিরা

রংপুর টাইমস:
নোয়াখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইরিবোরো চাষের ধুম পড়েছে। তবে এবার সার-শ্রমিকসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা।

একদিকে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। অন্যদিকে ৫০০ টাকার শ্রমিক রোজ হাঁকাচ্ছেন ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। সঙ্গে দিতে হচ্ছে নাস্তা ও দুপুরের খাবার।

 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, এ বছর জেলার ৯ উপজেলায় ৯৮ হাজার হেক্টর জমিতে ইরিবোরো চাষ হচ্ছে। এরমধ্যে হাইব্রিড জাতের ৮২ হাজার ৫৭৫ হেক্টর এবং উফসি জাতের ১৫ হাজার ৪২৫ হেক্টর। এসব জমিতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় লাখ ৯৬ হাজার ২৩৭ মেট্রিক টন। মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ধানচাষ সম্পন্ন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, নোয়াখালীর চাটখিল, সোনাইমুড়ী, সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, সদর, সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলায় ইরিবোরো ধানচাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কাঁকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পৌষের কনকনে শীত উপেক্ষা করে ধানের জমি প্রস্তুত, সার ছিটানো ও ধানের চারা রোপন করছেন চাষিরা। গতবার বাজারে ধানের ভালো দাম পাওয়ায় এবার অনেকে উৎসাহ নিয়ে চাষাবাদে নেমেছেন।

বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ইউরিয়া সার প্রতি কেজি ২৯-৩০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে টিএসপি, এমওপি এবং ডিএপি সারও নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আগের চেয়ে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন উপকরণের দামও ২৫ থেকে ৩০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

অন্যদিকে শ্রমিকের হাটগুলোতে আগের তুলনায় মৌসুমী শ্রমিকের সংখ্যাও কম দেখা গেছে। আগে যে শ্রমিক সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিনবেলা খেয়ে রোজ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় খাটতেন, এবার তারা শীতের কথা বলে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কাজ করতে রাজি হচ্ছেন। তাও খাবারসহ দাম হাঁকাচ্ছেন রোজ ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা।

 

সোনাইমুড়ী উপজেলার সোনাপুর গ্রামের বর্গাচাষী সুধির চন্দ্র দাস (৬০) জানান, দীর্ঘদিন অন্যের জমি চাষ করে ঘরের খোরাকি (খাবার) জোগাড় করি। গত বছর ৭০ শতাংশ জমি চাষ করে খোরাকি রেখে বাড়তি ৪০ মণ ধান এক হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এবার ১০০ শতাংশ জমি চাষ করছি। আশা করছি ১০০ মণ ধান পাবো। কিন্তু যে হারে সার ও শ্রমিকের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে খরচ উঠবে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় আছি।

চাটখিল পৌরসভার সুন্দরপুর মহল্লার কৃষক নুর মোহাম্মদ (৫০) জানান, এবার তিনি তিন একর (৩০০ শতাংশ) জমিতে ইরিবোরো চাষ করছেন। জ্বালানি তেল, সার ও শ্রমিক মজুরির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে ধান উৎপাদনে খরচের পরিমাণ অনেকগুণ বেড়ে যাবে। এতে চাষাবাদের প্রতি আগ্রহ হারাতে বসেছে চাষিরা।

 

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাজারে সারের মনিটরিং না থাকায় অসাধু সিন্ডিকেট সারসহ সকল উপকরণের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করে চলেছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ধানচাষের এই ভরা মৌসুমে কৃষকদের অনেক উপকার হতো।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, জানুয়ারি মাস পুরোটাই ইরিবোরো চাষের কার্যক্রম চলবে। বাজারে পর্যাপ্ত সার রয়েছে। সারের অতিরিক্ত দাম নেওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, জেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে সার মজুত রয়েছে। নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে অভিযোগ এখনো আমার কাছে আসেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT