লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় ঋণের টাকা পরিশোধ করেও আশা (এনজিও) এর চেকের মামলায় কারাগারে যেতে হয় যুবলীগ নেতা শাহ নাজমুল ইসলামকে(৩৩)। এক সপ্তাহ কারাগারে অবস্থানের পর কারাগারের হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এ ঘটনায় হাতীবান্ধা উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা আশা অফিসে গিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।
বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুরে লালমনিরহাট থেকে যুবলীগ সভাপতি নাজমুল হোসেনের লাশ গ্রামের বাড়িতে আসে পুরো এলাকা জুড়ে চলে শোকের মাতম।
এর আগে বুধবার (৯ আগস্ট) সকাল১১টায় আশা এনজিওর হাতীবান্ধা ব্রাঞ্চ ঘেরাও করে তাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে তালা দিয়ে দেন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
এর আগে গক মঙ্গলবার বিকেলে লালমনিরহাট জেলা কারাগারে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে সেখাইে মারা যায় নাজমুল।
নিহত নাজমুল ইসলাম হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের বেজগ্রাম এলাকার মৃত সোলেমান গনি ওরফে দুলালের ছেলে। সে উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক ছিলেন।
জানা গেছে, আশা এনজিও হাতীবান্ধা ব্রাঞ্চ থেকে ২০১৭ সালে ১ লক্ষ টাকা ঋন নেন যুবলীগ নেতা নাজমুল। নির্ধারিত সময় পেড়িয়ে গেলেও ঋনের টাকা পরিশোধ না করায় লালমনিরহাট আদালতে তার বিরুদ্ধে প্রায় ৭৭ হাজার ৫ শত ৮৩ টাকার একটি মামলা করেন আশা এনজিও। মামলা চলাকালীন তিনি প্রথমে আদালতের মাধ্যমে ৩৮ হাজার টাকা ও পরে আশা এনজিও হাতীবান্ধা ব্রাঞ্চে বাকি টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু এনজিও মামলাটি তুলে নেয়নি। সেই মামলায় নাজমুল গত ২৩ জুলাই আদালতে হাজির হলে তাকে লালমনিরহাট জেলা কারাগারে পাঠনো হয়। পরে মঙ্গবার ৮ আগস্ট উচ্চ আদালত থেকে জামিন পায় নাজমুল। কিন্ত ওই দিন বিকেল ৩টার দিকে কারাগারের ভেতর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় নাজমুল।
এ বিষয়ে নিহত নাজমুলের স্ত্রী হাসিনা বেগম বলেন, এনজিও মামলা করলেও তার স্বামী সম্পূর্ন টাকা পরিশোধ করেন। ৩৮ হাজার আদালতের মাধ্যমে ও বাকি ৩৮ হাজার ৫শ ত টাকা অফিসেই জমা করা হয়। কিন্ত সেই পরিশোধিত টাকার কোন কাগজ তারা আদালতে জমা না করায় আদালত আমার স্বামীকে জেলে পাঠায়। এনজিও অফিসের লোকজন যদি টাকা পরিশোধের কথা আদালতে বলতো তাহলে আজকে আমি আমার স্বামীকে হারাতাম না আর আমার সন্তানও বাবাকে হারাতো না বলেই কান্না ভেঙ্গে পড়েন নাজমুলের স্ত্রী।
নিহত নাজমুলের মা নাজমা বেগম বলেন, আমার ছেলেও আশা এনজিও মামলায় জেলে যায়। কিন্ত আমার ছেলে তো সব টাকা শোধ করেছে। তারপরেও কেন তাকে জেলে যেতে হলো।
এ বিষয়ে আশা এনজিও হাতীবান্ধা ব্রাঞ্চের ম্যানেজার ফারুক হোসেন বলেন, প্রায় ৫ বছর আগে তিনি ঋন নেন। ঋনের টাকা শোধ না করায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। সেই মামলায় জেলে থাকা অবস্থায় তার মৃৃত্যু হয়েছে। তার ঋন পরিশোধ করার পরেও জেলে কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা আদালতের বিষয়। এখানে আমাদের কিছু করার নাই। তিনি আরও বলেন, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। সকাল থেকে কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি পুলিশ ও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর ইসলাম শাহিন বলেন, নাজমুল এনজিওর মামলায় কারাগারে ছিল আর সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছে। এনজিওর গাফলাতির কারনে তার মৃত্যু হয়েছে। এনওজিওকে এর ক্ষতি পূরণ দিতে হবে।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহা আলম বলেন, কারাগরে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আর সেই ঘটনায় এনজিও অফিসে তালা দেওয়া হয়েছে। তবে আসা এনজিও থেকে কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।