লালমনিরহাট প্রতিনিধি।।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার হাজিরহাট এলাকার পাশাপাশি প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত দুইটি সেতু মানুষের কাজে আসছে না। ঝকঝকে রঙ্গিন সেতু হলেও তা মই বেয়ে উঠতে হয়।
চলতি মাসের বন্যায় দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে সেতু দুইটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
এতে দুর্ভোগে পড়েছে ওই এলাকার ৩০ হাজার পরিবার। সেতুর একপাশে দেওয়া সামান্য মাটি পুরোপুরি সরে গিয়ে বিশাল খাদ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে স্থানীয়রা সেতুতে উঠছেন কাঠের ‘মই’ দিয়ে। এভাবে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে মানুষ পারাপার করছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ তরে বলেন, পরিকল্পনায় ত্রুটি ও অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় তাদের দীর্ঘদিনের ‘স্বপ্নের সেতু’ প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় সেতুটি পাইলিংয়ের বদলে ‘বেজ ঢালাই’সহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে নির্মাণ শেষ করে বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে দুটি সেতুর উভয় পাশেই মাটির অ্যাপ্রোচ রোড (সংযোগ সড়ক) তৈরিও করেনি সংশ্লিষ্টরা।
নির্মাণ কাজ চলাকালে এ বিষয়ে দাবি তুললেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার- প্রকৌশলীরা তা আমলে নেননি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার বৈরাতী গ্রামের হাজিরহাট এলাকার একটি খালে সেতু দুটি তৈরি করা হয়েছে। উত্তর-দক্ষিণের সেতুটি ‘রংপুর অঞ্চলের ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন ও সেচ দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্পের আওতায় ‘বড় আকারের হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার-ফুটব্রিজ’ নির্মাণ করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন(বিএডিসি)। ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকায় ৩০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি নির্মাণ কাজ পায় নেত্রকোনার ‘এ টি এল এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজ পেয়ে ওই ঠিকাদার স্থানীয় আওয়ামীলীগ এক নেতার কাছে কাজটি বিক্রী করে দেন। অপর দিকে ওই খালের পূর্ব-পশ্চিম দিকের ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটির জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরকে অর্থায়ন করে জাপান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা)। এর ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৭০ লাখ টাকা। টেন্ডারের মাধ্যমে এটি নির্মাণের কাজ পায় আদিতমারীর মো. ইব্রাহিম নামের একজন ঠিকাদার। সেটিও স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতার কাছে বিক্রী করেন। যার ফলে দেড় কোটি টাকা সেতু ৫০ লক্ষ টাকার কাজ হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,খালের তুলনায় দুইটি সেতু ছোট হওয়ার লোকজন খালে নেমে এরপর সেতুতে উঠে পারাপার করতে হচ্ছে। বৃষ্টি বা বন্যার পানি আসলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের ‘ত্রাণের ব্রিজ’ হিসাবে পরিচিত সেতুর পূর্ব পাশে করা হয়নি সংযোগ সড়কের কাজ। সেখানে সামান্য যা মাটি ছিল তা ভেসে গিয়ে খাদে পরিনিত হয়েছে। ফলে স্থানীয় লোকজন নিজেদের উদ্যোগে বাঁশ-কাঠ দিয়ে মই আকৃতির সিঁড়ি বানিয়ে অনেক কষ্ট করে সেই সেতুতে উঠছে। তবে সেখান দিয়ে কোনো ধরণের যানবাহন পারাপারের সুযোগ নেই। সেতুর পশ্চিম প্রান্তের মাটিও কিছুটা সরে গেছে।
অপরদিকে বিএডিসি নির্মিত সেতুরও প্রায় একই হাল। সেতুর দুই পাশের অনেক জায়গার মাটি সরে গিয়ে গর্ত সৃষ্টি হয়। ফলে ওই এলাকার লোকজন পারাপার করছেন খাল-পানি মাড়িয়ে।
চলতি মাসে বন্যার ক্ষতি এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জমান আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে ব্রিজটি করা হলে আজ এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না। এ বিষয়ে এক্সপার্টদের সাথে কথা বলে ব্রিজ দুটি যাতে স্থায়ীভাবে তৈরি করে মানুষের যাতে আর কোনো ধরণের দুর্ভোগের সৃষ্টি না হয় সেজন্য ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে’।
ওই এলাকার আফজাল হোসেন বলেন, নতুন ব্রীজ পাইলেও ব্রীজে উঠতে হয় কষ্ট কইরা। কষ্ট যদি পাই তাইলে টাকা খরচ কইরা কি লাভ হল। এখন চিন্তায় আছি বড় বন্যা আসলেই ব্রিজের কারণে আমাদের বাড়িঘর ভাইংগা যাইবো।
ওই এলাকার দুলাল মিয়া বলেন, ‘ব্রিজের এখানো কোনো রাস্তা করে নাই। তারা বলছিল ব্রিজ যখন কমপ্লিট হবে তখন রাস্তা বাইন্দা দিয়া যাব কিন্তু তারা ব্রিজটা কইরা চইলা গেছে। এইজন্য ব্রিজ হয়াও আমাদের কষ্ট, এখন মই লাগায়া চলাচল করছি।’
এ ব্যাপারে কথা হয় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহমেদ বলেন,ত্রাণ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অর্থায়নে সদ্যোনির্মিত ব্রীজ টি তিস্তার ভয়াবহ বন্যায় সংযোগ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাটি ভরাটের কাজ চলমান রয়েছে। খুব শিগগিরই সেতুটি চলাচলের রাস্তা নির্মাণ করে সেতুটি চলাচলের উপযোগী করা হবে।
লালমনিরহাট বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী মোনায়েম হোসেন বলেন,বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন(বিএডিসি) অধীনে যে সেতু নির্মাণ হয়েছে তার সংযোগ সড়ক করা হয়েছিল সম্প্রতি বন্যায় তা ভেঙে গেছে। তিনি আরও বলেন, ওই ঠিকাদারের জামানতের টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। ওই ঠিকাদার আবারো সড়ক নির্মাণ করবেন।
তিনি আরও বলে, দুর্যোগ ব্যবস্থার অধীনে যে সেতু নির্মাণ হয়েছে তার আগে এই সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।