‘বাড়ির চারপাশে পানি, ঘরে কাদা। ৮ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছি। এর মধ্যেই হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল। চুলার ভেতরে পানি ওঠায় রান্না করতে পারি না। অন্যের বাড়ি থেকে একবেলা রান্না করে এনে তিনবেলা খাই। কাজ নাই, কাম নাই। খুব কষ্টে আছি। মেম্বার-চেয়ারম্যানতো খোঁজে নেয় না। নিচু জায়গায় বাড়ি করে খুব কষ্ট করে থাকি। টাকা পয়সাও নাই যে উঁচু জায়গায় জমি কিনে বাড়ি করবো।’
কথাগুলো বলেছিলেন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের রেপুনা বেগম। শুধু রেপুনা বেগমই নয় ওই এলাকার একাধিক পরিবারের দুর্ভোগের চিত্র একই।
বিজ্ঞাপন
jagonews24
সরেজমিনে দেখা যায়, স্বামী-সন্তানসহ একটা মাত্র ঘরে বাস রেপুনা বেগমের। পাশে হাঁস-মুরগির খোয়াড়। ঘরে কাদা আর আঙিনায় পানি। দুদিন আগে ওই বাড়িতে ছিল কোমর পানি। পুরুষ মানুষ নৌকায় কিংবা সাঁতরে উঁচু স্থানে গিয়ে সময় কাটাতে পারলেও বাড়ির শিশু, বৃদ্ধ ও নারীরা পড়েছেন বিপদে। এমন পরিস্থিতিতে ত্রাণ সহযোগিতা নয়, সরকারি বা কোনো এনজিও যদি তাদের ভিটেমাটি উঁচু করে দেয় তাহলে খুবই উপকৃত হবেন বলে জানান তিনি।
বিজ্ঞাপন
হাতিয়া গ্রামের বাসিন্দা আকিলা বেগম বলেন, বর্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের দুঃখ দুর্দশার শেষ নাই। এ সময় বাড়ির কর্তাদের কাজ কাম না থাকায় আমরা খুব কষ্টে জীবনযাপন করি। মাঝে মধ্যে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পাই। সেটা দিয়ে কি আর চলে? গরিব মানুষের দুঃখ বারোমাস।
উপজেলার মাঝের আলগার চরের বাসিন্দা আমিনা খাতুন বলেন, এক সপ্তাহ থেকে বন্যার পানিতে বসতবাড়ি তলিয়ে আছে। কাঠখড়ি-জ্বালানি যা ছিল সব শেষ, শান্তিমতো রান্না করে দুই বেলা খাবো তারও উপায় নাই। খড়ির মঙ্গা দেখা দিছে। ঘরে চাল থাকলেও রান্না করে খাওয়ার উপায় নাই।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জেলায় তিস্তা নদীর পানি ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ৩৫ ও ৩৮ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। অন্যান্য নদ-নদ নদীর পানিও কমতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত বন্যার পূর্বাভাস অনুযায়ী সপ্তাহে বড় ধরনের কোনো বন্যার শঙ্কা নেই।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। বন্যার পানির স্রোতে জেলায় ৫টি স্থানে ৭৮০ মিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৮. ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়ে ৫ হাজার ২৮০টি পরিবার বন্যার কবলে পড়েছে। আমাদের ত্রাণ বিতরণের কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জেলায় বন্যার্ত মানুষের জন্য ১৮টি স্থায়ী ও ৩৬১টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ২৮০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা এবং ৩ হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার মজুত আছে। গো-খাদ্যের জন্য ৫ লাখ টাকা এবং শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ মজুত রয়েছে।