শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন

ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ বন্ধের দাবিতে বেরোবিতে মানববন্ধন

ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস গাছ রোপণ বন্ধের দাবিতে বেরোবিতে মানববন্ধন

সিদ্দিকুর রহমান (সিদ্দিক) বেরোবি:

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও রিভারাইন পিপল ক্লাব বেরোবি এর যৌথ উদ্যোগে ‘প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর ইউক্যালিপটাস গাছ উৎপাদন, বিপণন ও রোপণ বন্ধের দাবিতে’ ২১ জুন ২০২৩ তারিখে সকাল ১১:৩০-১২:৩০ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নং গেটের সামনে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও রিভারাইন পিপলের পরিচালক ড. তুহিন ওয়াদুদ। সঞ্চালনা করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রিভারাইন পিপল ক্লাবের সদস্য সচিব শিহাব প্রধান। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর রাজশাহী কার্যালয় সমন্বয়কারী তন্ময় সান্যাল, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রিভারাইন পিপল ক্লাবের আহবায়ক ছাওমুন পাটোয়ারী সুপ্ত, কারমাইকেল কলেজ রিভারাইন পিপুলের আহবায়ক মিরাজুল ইসলাম মিরাজ প্রমুখ।

রিভারাইন পিপলের পরিচালক ড. তুহিন ওয়াদুদ
বলেন,আমাদের দেশেও ইউক্যালিপটাসের বাগান/বনায়নের ফলে সরাসরি বেশ কিছু প্রভাব পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের উপর পরিলক্ষিত হয়। যেমন- মাটি, পানি, জলবায়ু পরিবেশ ও প্রতিবেশ, মানব স্বাস্থ্য, পশুপাখি ও কীটপতঙ্গেও উপর প্রভাব। এসব বিদেশী গাছ আমাদের দেশীয় প্রজাতি ধ্বংসের পাশাপাশি মাটির উর্বরতা নষ্ট, প্রাণির অভয়াশ্রম নষ্ট, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের ক্রমাবনতি, প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপর্যয় ইত্যাদির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরও বলেন,বন ধ্বংসের বিকল্প হিসেবে সামাজিক বনায়নকে প্রাধান্য দিয়ে দেশে নানা কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৭০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইউক্যালিপটাসসহ বেশকিছু বিদেশী দ্রুত বর্ধনশীল গাছ আমাদের দেশে আসে। পরবর্তীতে উপজেলা পর্যায়ে ‘সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি এবং সরকারের বনবিভাগের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইউক্যালিপটাস ও অন্যান্য বিদেশী গাছ ব্যাপকভাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। লাগানো হয়েছে।

উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় প্রথম এই গাছের চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয় এবং এভাবেই ইউক্যালিপটাসসহ কিছু বিদেশী গাছ ছড়িয়ে পড়ে দেশের সর্বত্র। যদিও বন রক্ষায় বা পুনরুদ্ধারে এ সকল প্রকল্প তেমন কার্যকরী নয় বরং সামাজিক বনায়নের নামে ভিন্ন ও বিদেশী প্রজাতির বৃক্ষ (ইউক্যালিপটাস, একাশিয়া ইত্যাদি) রোপণ বা চাষ প্রাকৃতিক বনায়ন রক্ষার পরিবর্তে ধ্বংস করছে। নির্দিষ্ট আবর্তনকালের পরও পুনরায় বন ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর রাজশাহী কার্যালয় সমন্বয়কারী তন্ময় সান্যাল বলেন,দ্রুত বর্ধনশীল এবং অভিযোজন ক্ষমতার কারণে ইউক্যালিপটাস অনেক দেশেই কাঠের গাছ হিসাবে জনপ্রিয়তা পেলেও এর রয়েছে নানা অভিযোগ ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া। এই গাছে অধিক পরিমাণে তেল থাকায় এটা বেশ দাহা এবং এর আবাসভূমি অস্ট্রেলিয়াতে একে অগ্নি সৃষ্টিকারী হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়।

তাই সেখানে আবাসিক এলাকায় এবং ঘরবাড়ির কাছে এই গাছ কম লাগানো হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইউক্যালিপটাসের ক্ষতিকর প্রভাব পরিলক্ষিত হওয়ায় সেখানকার কৃষিজমি, নদীর ধার ও নদী অববাহিকা ইত্যাদি স্থানে এ ধরনের বৃক্ষ রোপন নিষিদ্ধ করা হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এই গাছের বনায়নের ফলে সেখানকার বসন্তকাল হারিয়ে যেতে থাকে এবং তা সরাসরি দেশিয় প্রজাতিকে উচ্ছেদ / সরিয়ে দেয় যা দেশিয় প্রজাতির জন্য হুমকীস্বরূপত। এ ধরনের বনায়নে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কিছুটা হয় বটে, তবে স্থানীয় মানুষের প্রচলিত জীবন- যাপনের মান ব্যাহত হয়। শুধু তাই নয়, এ ধরনের বনায়নে ভূমির ব্যবহারেও পরিবর্তন দেখা যায়। অন্য একটি গবেষণায় বলা হয়, দেশীয় প্রজাতি ও ইউক্যালিপটাসের বনায়ন পাশাপাশি করা হলে অনেক সময় জীববৈচিত্র্যে সুসমন্বয়ের অভাব দেখা দেয়, অথবা অনাকাংখিত অনেক প্রজাতি পুনরায় ফিরে আসে যা প্রাকৃতিক বনায়নের ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটায়”।

ভারতের কিছু কিছু প্রদেশে ইউক্যালিপটাসের বনায়ন করা হলেও ২০১৪ সালে পাঞ্জাবে ভূ-গর্ভস্থ পানি কমে যাওয়া ও মাটির শুষ্কতা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ইউক্যালিপটাসকে দায়ি করে স্থানীয় কৃষকগণ গ্রীণ ট্রাইবুনালে আবেদন দাখিল করে।

কারমাইকেল কলেজ রিভারাইন পিপুলের আহবায়ক মিরাজুল ইসলাম মিরাজ বলেন,
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা ও পঞ্চগড়ের মহাসড়ক এবং সামাজিক বনায়ন কর্মসূচিতে একটু নজর দিলেই তার প্রমান মিলবে। এই অঞ্চলের জেলাগুলোতে ইউক্যালিপটাস গাছের সংখ্যা কত এবং এই গাছের প্রভাবে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি হচ্ছে কিনা বা কি পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে তার কোনো পরিসংখ্যাণ এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার তথ্য বনবিভাগ বা পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে নেই। দেশে সবচেয়ে বেশি ইউক্যালিপটাস চোখে পড়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে।

রাস্তার ধারে, আবাদী জমিতে, ধান ক্ষেতের আইলে, পুকুর পাড়ে এমনকি কারো কারো উঠানেও লাগানো হচ্ছে ইউক্যালিপটাস। সরকারি পর্যায়ে বিধি-নিষেধ থাকলেও বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারীসহ অনেক জেলার নার্সারীগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে ইউক্যালিপটাসের চারা উৎপাদন এবং পরবর্তীতে তা রোপণ করা হচ্ছে। এমনকি বনবিভাগের সামাজিক বনায়ন কর্মসূচিতেও এই গাছ রোপণ করা হয়ে থাকে। নানা বির্তকের প্রেক্ষিতে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ২০০২ সালে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানো বন্ধের পদক্ষেপ নিলেও শেষ পর্যন্ত তা বাতিল হয়ে যায়। তবে ইউক্যালিপটাসের ক্ষতিকর দিকের কথা বিবেচনা করে বন অধিদপ্তরের সুপারিশ অনুযায়ী, একটি বনের ১০% এর বেশি এই গাছ লাগানো যাবে না বলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

তিনি আরও বলেন,সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিদেশী প্রজাতির ইউক্যালিপটাস উৎপাদন ও রোপণ কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। কোনো ভিনদেশী প্রজাতির অন্তর্ভূক্তি যদি আমাদের বাস্তুসংস্থানের নিজস্বতাকে হুমকিতে ফেলে তাহলে তা পরিহার করাই মঙ্গল।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024 Rangpurtimes24.Com
Developed BY Rafi IT